• রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

চেনা ক্যাম্পাসের অচেনা রূপ

Reporter Name / ১৩৩ Time View
Update : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঘাস, লতা-পাতায় ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রিয় আড্ডাস্থলগুলো। নির্জন ক্যাম্পাসের পুরোটাতেই এখন সবুজের সমারহ। গাছে গাছে কচিপাতা। সবুজ আর সবুজ। সেই সবুজের আড়ালে বাসা বেঁধেছে দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, ডাহুকসহ হাজারো পাখি। কান পাতলে কেবল পাখিদের কিচিরমিচিরই শোনা যায়। গাছের ডালগুলোতে খেলা করছে কাঠবিড়ালি। গোলাপ, জবাসহ নাম জানা অজানা নানান ফুল ছড়াচ্ছে মন মাতানো সৌরভ। এ যেন চিরচেনা ক্যাম্পাসের অচেনা রূপ।

করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দীর্ঘদিনের ছুটিতে ক্যাম্পাসের চিরচেনা রূপ-ই যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল মতিহারের সবুজ চত্বর। তবে এপ্রিলের শুরুর দিকে ফের দেশব্যাপী লকডাউনের ফলে ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। ফাঁকা ক্যাম্পাসে মানুষের অনুপস্থিতে প্রকৃতি যেন সেজেছে নিজের মতো।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ফাঁকা প্যারিস রোডের গগন শিরীষ গাছগুলো যেন আরো সজীব হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের প্রিয় নীল-সাদা বাসগুলো সারিবদ্ধ হয়ে পরিবহন চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে। ড. মুহাম্মদ শহিদ্ল্লুাহ ও মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের ধার ঘেঁষে রাস্তায় সুভাস ছড়াচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল। শিক্ষার্থীদের প্রাণের আড্ডাস্থল টুকিটাকি চত্বর এখন পাখিদের দখলে। সেখানে আর কেউ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যাচ্ছে না অতীত স্মৃতিচারণে। গিটারে সুরও তুলছে না কেউ। আমগাছগুলোর গায়ে খেলা করছে কাঠবিড়ালি।
হবিবুর রহমান হল থেকে একটু পশ্চিমে যেতেই শোনা গেল কিচিরমিচির শব্দ। সেই শব্দ ফাঁকা ক্যাম্পাসকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছে। পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের গাছগুলোতে বসে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। নিচেই ফিশারিজ বিভাগের গবেষণা পুকুরের স্বচ্ছ সবুজ পানিতে হাজারো পাখির ঝাঁপাঝাঁপি।

পড়ন্ত বিকেলে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ধার ঘেঁষে চারুকলার রাস্তা ধরে এগোতেই দেখা গেল দুটো শিয়াল পাশের ঝোপে প্রবেশ করে নিজেদের আড়াল করে নিল। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘নিউজিল্যান্ড’ নামে পরিচিত এই ঝোপের ওপরে তাকাতেই দেখা গেল উঁচু মেহগনি গাছগুলোতে ঝুলে আছে বাদুরের দল। নির্ভয়ে তারা ডানা ঝাঁপটাচ্ছে। গাছপালা আর পশু-পাখিতে তৈরি হয়েছে মধুর মেলবন্ধন।

বন্ধ ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ করতে পারায় পশুপাখি সহজেই বংশবৃদ্ধি করতে পারছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও উপ-পাউচার্য আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের পশুপাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিগত তিন বছরে প্রায় চার হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। যা ক্যাম্পাসকে আরো সজীব করে তুলেছে। এসব উদ্ভিদের ফল খেয়ে পশুপাখিগুলো সহজে জীবন-ধারণ করতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, যেখানে জনসমাগম বেশি সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বন্য প্রাণীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান না করার ক্যাম্পাসের পশুপাখিগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারছে। প্রজননেও তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছে না। ক্যাম্পাসের ঘুঘু ও বকগুলো তুলনামূলকভাবে ভীত প্রাণী হওয়ায় আগে তেমন জনসমক্ষে আসত না। বর্তমানে অবাধ বিচরণের ফলে এরা সহজেই বংশবিস্তার করতে পারছে।

আরবিসি/১৭ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category