স্টাফ রিপোর্টার : বছর ঘুরে নতুন স্বপ্ন নিয়ে এসেছে বাংলা নববর্ষ। আজ বুধবার ১৪২৮ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। বাঙালীর পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর প্রধান অসাম্প্রদায়িক উৎসব। বাজেনি নাকাড়া, নহবৎ ধ্বনি, সানাইঅথবা শাঁখ/ তবু এসে গেছে নব পল্লবে, নব উৎসবে,/নব জীবনের নব অনুভবে, বৈশাখ…।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবারও বৈশাখ কিছুটা বিবর্ণ। উৎসবহীন। হাসিরাশি আনন্দ বলা চলে উধাও। তবুও সময় বয়ে যায়। পুরনোকে পেছনে ফেলে আসে নতুন। সেই নতুনকে লোক আচার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল আলোয় বরণ করে নেবে বাঙালী।
আজ পুরনো দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে, স্বপ্নের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার দিন। সকল ভয়কে জয় করার মানসে নতুন করে জেগে ওঠার উপযুক্ত সময়। কবিগুরুর ভাষায় : নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে/শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে…। একই আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে নজরুল লিখেছেন: তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর…।
অবশ্য জয়ধ্বনি করার কথা কবি বললেও, এবার ভিন্ন বাস্তবতা। প্রকৃতি বড় রুষ্ঠ। করোনার প্রাদুর্ভাবে পর্যুদস্ত পৃথিবী। সদা দাপিয়ে বেড়ানো মানুষ ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়েছে। পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ নেই। একে অন্যের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলেছে শুধু। এ অবস্থায় আজ বর্ষ শুরুর দিনে সামাজিক দূরত্ব মেনে নিয়েও, মানসিকভাবে পরস্পরের কাছে থাকার শপথ নেবে বাঙালী।
রমনার বটমূলে যাওয়া হবে না। ছায়ানটের শিল্পীদের সঙ্গে গান গাওয়া হবে না। আয়োজন করা হবে না মঙ্গল শোভাযাত্রার। তবে বাঙালী তার মনের রংটুকু ধরে রাখবে। হতাশায় না ডুবে সবাই মিলে একসঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। ভবিষ্যতে আরও সুন্দর আরও বর্ণাঢ্য নববর্ষ উদ্যাপনের স্বার্থেই এবার ঘরে বসে নিজেদের মতো করে উদ্যাপন করবে বাঙালী। বর্ষ শুরুর দিনে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলা নববর্ষ এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালী জনগোষ্ঠী বর্ষবরণ উৎসবকে ঐতিহ্যগতভাবে ধারণ করেছে। বিগত বছরের দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এবার ঘরে বসে যে যার মতো করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবেন। অনেকে গান করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। নতুন জামা কাপরও সংগ্রহ করেছেন কেউ কেউ। বাকিরা গত বছরের শাড়ি পাঞ্জাবি গায়ে দিয়েই ঘরোয়া আয়োজনে যোগ দেবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজ দৃশ্যমান হবে নতুন এক উদযাপন।
আরবিসি/১৪ এপ্রিল/ রোজি