আরবিসি ডেস্ক : করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর নিষেধাজ্ঞা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। রোববার (১১ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১ ও ২ নম্বর স্মারকের ধারাবাহিকতায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ আগামী ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।
এর আগে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এ সময়ের জন্য ১১ নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
ওই প্রজ্ঞাপনে ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়, সেগুলো হলো-
(ক) সকল প্রকার গণপরিবহণ (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে, পণ্য পরিবহণ, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া বিদেশগামী/বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না;
(খ) আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
(গ) সকল সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃক শিল্প-কারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
(ঘ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না;
(ঙ) খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (টেকঅ্যাওয়ে/অনলাইন) করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না;
(চ) শপিং মলসহ অন্যান্য দোকানসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে দোকানসমূহ পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা স্বশরীরে যেতে পারবে না;
(ছ) কাঁচাবাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে;
(জ) ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে;
(ঝ) সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে;
(ঞ) সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে; এবং
(ট) এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রজ্ঞাপনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন নির্দেশনাগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। এ প্রজ্ঞাপন জারির পর গণপরিবহন চলাচল ও শপিংমল বন্ধের নির্দেশনা শিথিল করা হয়।
এদিকে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকালে সরকারি বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। কিন্তু এতেও কমেনি জনগণের উদাসীনতা। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা ভাবনা করছে।’
পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকার ১৪ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে, যেটি হবে কমপ্লিট (পূর্ণাঙ্গ) লকডাউন। এই লকডাউনের সময় বাড়ানো হবে কি না তা নিয়ে ২০ তারিখে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের কাছে মেসেজ হলো- সতর্ক থাকতে হবে, বাইরে আসা যাবে না। এটি অত্যন্ত কঠিন একটি লকডাউন হবে। অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে, বাইরে আসা যাবে না। শুধু জরুরি সেবা চালু থাকবে৷ সব যানবাহনও বন্ধ থাকবে।
আরবিসি/১১ এপ্রিল/ রোজি