আরবিসি ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু দেখল ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে একদিনে মারা গেছে চার হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু সংক্রমণ প্রতিরোধে এরপরও বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে ক্রমাগত বিরোধিতা করেই যাচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো দেশটিতে রেকর্ড ৪ হাজার ১৯৫ জন মারা গেছেন। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে যা দেশটির জন্য রেকর্ড। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হারও বাড়ছে দ্রুতগতিতে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির হাসপাতালগুলোতে এখন নতুন রোগীদের জায়গা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। অনেক শহরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে রোগীরা মারা যাচ্ছেন। এছাড়া দেশটির অনেক জায়গায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তবে এরপরই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ২৯ লাখের বেশি। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ।
অবশ্য ব্রাজিলের কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো এসব কিছু বিবেচনায় নিতে নারাজ। সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে তিনি আগের মতোই ক্রমাগত বিরোধিতা করে যাচ্ছেন।
তার দাবি, লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হবে এবং এর প্রভাব করোনা মহামারির বিদ্যমান প্রভাবের চেয়ে বেশি হবে। এমনকি প্রাদেশিক সরকারসহ স্থানীয় কিছু কর্তৃপক্ষের জারি করা বিভিন্ন বিধিনিষেধও শিথিল বা কিছু ক্ষেত্রে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
মঙ্গলবার নিজের বাসভবনের বাইরে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে কোয়ারেন্টিনের সমালোচনা করেন বলসোনারো। তার দাবি, কোয়ারেন্টিন বা একাকী বসবাসের সঙ্গে স্থুলতা ও বিষণ্নতার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যা মানুষকে বেকারত্বের দিকে নিয়ে যায় বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে করোনা সংক্রমণ কমাতে দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকসহ স্থানীয় পর্যায়ের কিছু রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপের ওপর জোর দিচ্ছেন। তারা কঠোর লকডাউন ঘোষণারও দাবি জানাচ্ছেন।
ব্রাজিলের এসপিরিটো সানটো ফেডারেল ইউনিভার্সিটির মহামারি বিশেষজ্ঞ এথেল ম্যাসিয়েল বার্তাসংস্থা এএফপি’কে জানান, ‘আমরা খুবই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছি। এরপরও করোনা মহামারির বিষয়ে প্রাদেশিক বা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পারছি না।’
এমনকি করোনা প্রতিরোধে চলমান টিকাদান কার্যক্রমও স্তিমিত হয়ে পড়েছে ব্রাজিলে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশেরও কম মানুষ কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন।
আরবিসি/০৭ এপ্রিল/ রোজি