• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
রাবির ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৩৩ জনের নানা মেয়াদে শাস্তি রাজপাড়া থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করলেন আরএমপি পুলিশ কমিশনার উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক পাকিস্তানি চিনি, আলুসহ শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে এলো সেই জাহাজ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন রাজশাহীর চারঘাটে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ সার সঙ্কটে রাজশাহীতে ব্যাহত হচ্ছে আলুচাষ, দামও অতিরিক্ত রাজশাহীতে ফের বাস ও সিএনজি চালকের সংঘর্ষ, দুই পক্ষের মীমাংসা স্থগিত কিডনি রোগীর চিকিৎসা আর আইফোন কিনতে ডাকাতির চেষ্টা: পুলিশ তনুর গ্রাফিতিতে পোস্টার সাঁটানো নিয়ে যা বললেন মেহজাবীন

দুয়ারে বৈশাখ, ফিঁকে উচ্ছ্বাসের রঙ

Reporter Name / ২১৯ Time View
Update : বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক : মহামারি করোনার ছোবলে এবার মলিন হওয়ার আশঙ্কা বৈশাখী রূপের। ইতমেধ্যে দরজায় বৈশাখী বার্তা কড়া নাড়লেও বৈশাখ থেকে রোজা আর মহামারীর করোনার কারনে মলিন হয়ে পড়েছে উচ্ছাসের রঙ।

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ফেলে আসা অতীতের ব্যর্থতা ও হতাশার বিপরীতে সাফল্যের বার্তা ও প্রেরণা নিয়ে প্রতি বছর হাজির হয় পহেলা বৈশাখ। নতুন শপথে দীপ্ত প্রত্যয়ে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেতনায় উদ্ভাসিত করে নতুন বছরের প্রথম দিন।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে বাঙালি মেতে ওঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। লাল-সাদা-রঙ্গিন পোশাকে সাঁজে যুবক-যুবতীরা। পিছিয়ে থাকে না শিশুরাও। সকাল থেকেই বাজতে থাকে রবি ঠাকুরের বিখ্যাত পঙক্তি, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেরোয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। পান্তা-ইলিশ আর পেঁয়াজ-মরিচ মুখে পুরে সাংস্কৃতিক আয়োজনে মেতে উঠে বাঙালি সমাজ। দোকানে দোকানে হিড়িক পড়ে প্রাচীন ঐতিহ্য হালখাতার। ধুম পড়ে পুরাতন হিসেবের জের ঘুচিয়ে নতুন খাতা উন্মোচনের।

গত বছর থেকে মরণব্যাধী করোনা আতঙ্কে পুরো বিশ্ব আতংকিত হওয়ায় রং হারাতে বসেছে চিরায়ত উৎসবটিও। অদৃশ্য ভাইরাসের প্রকোপে বৈশাখের আমেজ নেই কারোরই। বৈশাখের নয় বরং করোনার মাতনদোলায় বাসন্তি রং শাড়িতে ফুঁটে উঠেছে আতংকের কালো ছায়া। বৈশাখী পোশাকের জমিন জুড়ে রঙিন বুননের নকশা থাকলেও লেশ মাত্র নেই মনজুড়ে। লকডাউনে চার দেয়ালে বন্দী হয়েছে ললনাদের উচ্ছ্বাস। নানা বাদ্যে নয়.. বৈশাখের শাঁখে বাজবে হয়ত এবার বিষাদের সুর।

আসন্ন পহেলা বৈশাখ নিয়ে বিক্রেতাদের মাঝে আগাম বিস্তর পরিকল্পনা থাকলেও সবকিছুতেই ছেদ ফেললো লকডাউন। গত মাসের শেষ থেকে করোনা সংক্রমিত রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে আশঙ্কাজনক হারে। অনাকাঙ্খিত অতিথির মতো আবারও জীবনের চাকা রোধ করে ঘাতক ভাইরাসটি। প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছে হাজারো মানুষ। মৃত্যুবরণ করছে রেকর্ড সংখ্যক রোগী। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিক অবস্থায় এক সপ্তাহ লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখে পড়েছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, ট্যাক্স পরিশোধ, বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দোকান মালিকরা। গত বছরের ক্ষতি কাঁটিয়ে না উঠতেই আবারও করোনার হানায় মাথায় হাত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম আরডি মার্কেটের নূর গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল জব্বার বলেন, ইতোমধ্যে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মাল আনছি। ধার দেনা করে এখন চরম বিপদে পড়েছি। আমাদের যদি সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্তও অনুমতি দেয় অনেকটায় ক্ষতি পুষিয়ে উঠা যেতো।

তিনি আরও বলেন, বৈশাখে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে শাড়ি-পাঞ্জাবীর অর্ডার আসতো। গত বছর থেকে সেসবও নাই। সব মিলিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।
রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী বৈশাখী ফ্যাশনের মালিক শ্রাবণ হাসান বলেন, বৈশাখ নিয়ে আমাদের অনেক আয়োজন থাকে। এবারও নতুন কালেকশন আনা হয়েছে। হঠাৎ লকডাউনে সবকিছুতে ভাঁটা পড়লো। পহেলা বৈশাখে না হোক ঈদের মৌসুমটাও যদি ধরা যেতো তবুও কিছুটা লোকসান কাঁটতো।

নগরীর জলিল বিশ্বাস প্লাজার তিলোত্তমা বিপনী বিতানের দোকানী সোহেল রানা বলেন, শুধু পহেলা বৈশাখেরই টপস, ওয়ান পিচ, থ্রি পিচ, জুয়েলারী, হিজাব ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার মালামাল এনে বিপদে পড়েছি। এবার বিক্রি করতে না পারলে এক বছর টাকাগুলো পড়ে থাকবে।

এদিকে বৈশাখ উদযাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফ জামান নামের এক ব্যক্তি জানান, এবারও পহেলা বৈশাখ লকডাউনের মধ্যে হওয়ায় বিশেষ কিছু ভাবছেন না তিনি। রমজানের মধ্যে না হলে বিশেষ কিছু রান্না বা ঘোরাও সম্ভব না বলে জানান তিনি।
রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও আরডি মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ মামুদ হাসান বলেন, বৈশাখের মালামাল ইতোমধ্যে আনা হয়েছে। আমরা যদি এবারও না বিক্রি করতে পারি নিঃস্ব হতে হবে। মন্দা পরিস্থিতি কাঁটিয়ে উঠতে আমাদের দোকান খোলা রাখা খুবই জরুরি।

আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি। আশা করি একটা সুরাহা হবে।
এবারের বৈশাখে ইলিশের চাহিদাও চোখে পড়ছে না বলে জানান মাছ বিক্রেতারা। নগরীর সাহেব বাজারের মাছ বিক্রেতা মোবাইদুল ইসলাম বাদু বলেন, লকডাউনের কারণে বাজারে বেশি ইলিশ ঢুকছে না। সেজন্য দাম একটু বেশি। তবে রমজানে বৈশাখ হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা নেই বললেই চলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারকলা বিভাগও এবার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি বৈশাখ উদযাপনের।

আরবিসি/১১ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category