• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
রাজশাহীতে লাঞ্ছিতের পর ১২ ঘন্টা মেসে অবরুদ্ধ ছাত্রীরা, গ্রেপ্তার ৩ গভীর রাতে রাজশাহী সীমান্তে বিএসএফের দফায় দফায় গু’লি বর্ষণ, জনমনে আতঙ্ক রাজশাহীর বাগমারায় তেলের ট্রাক বিস্ফোরণে পুড়লো ৪শ ব্যারেল তেল, ৮ দোকান রাবির ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৩৩ জনের নানা মেয়াদে শাস্তি রাজপাড়া থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করলেন আরএমপি পুলিশ কমিশনার উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক পাকিস্তানি চিনি, আলুসহ শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে এলো সেই জাহাজ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন রাজশাহীর চারঘাটে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ সার সঙ্কটে রাজশাহীতে ব্যাহত হচ্ছে আলুচাষ, দামও অতিরিক্ত

রাজশাহীতে ঢিলেঢালা লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

Reporter Name / ১৫১ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সাত দিনের লকডাউন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনগণকে ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু এমন নিদের্শনা মানছেই না সাধারণ মানুষ। লকডাউনের মধ্যে স্বাভাবিক দিনের মতোই মানুষের চলাচলের চিত্র রয়েছে সবখানে। দুরপাল্লার পরিবহন ছাড়া রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করছে যথারীতি। বাজারগুলোতে ভিড় বাড়ছে। যেন জীবিকার কাছে জীবন উপেক্ষিত হয়ে দাড়িয়েছে।

গতবারের লকডাউন জনজীবনকে যেমন স্থবির করে তুলেছিল, খেটে খাওয়া মানুষের অর্থনীতিতেও নানাভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কমবেশি সব মানুষই হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত। তবে এবার সে চিত্র নেই। লকডাউনের সময়ে দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল মানুষ, এমনকি স্বল্প আয়ের মাসিক বেতনভুক্ত মানুষের আয়ের পথও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আগের লকডাউনের পরিস্থিতি সামাল দিতে সাধারণ মানুষের হিমশিম খেতে হয়েছে। এবার নতুনভাবে লকডাউন মানুষকে চিন্তায় ফেলেছে।

দীর্ঘদিনের করোনার প্রভাবে শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালক, স্কুটার ও ট্যাক্সিচালক, অন্যান্য পরিবহনশ্রমিক, ছোট দোকানদার, রাস্তার বিক্রেতা, নাপিত, বিউটি পারলারের কর্মী, আবর্জনা তোলার শ্রমিক, খণ্ডকালীন গৃহকর্মী, ইটভাটার শ্রমিক, রাস্তার পাশের খাদ্য বিক্রেতা, হোটেল এবং রেস্তোরাঁর শ্রমিক, ব্যক্তিপর্যায়ে কাজ করা বা বাণিজ্যিক ড্রাইভার, পণ্যবাহী শ্রমিক, কাঠমিস্ত্রি, ই-কমার্সের ডেলিভারি কর্মী এবং আরও অনেক অনানুষ্ঠানিক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখনও বেশির ভাগ উপার্জনহীন। মাঝে করোনা প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ার কারণে অনেকেই বিপর্যয় কাটিয়ে নিজ কর্মে ফেরার চিন্তা করছিলেন। কিন্তু আবার করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চরম চিন্তায় এসব খেটে খাওয়া মানুষ।

জীবন ও জীবিকার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এসব মানুষ করোনা মোকাবেলার প্রথম যুদ্ধে জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত থাকলেও এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ এবার জীবনের চেয়ে জীবিকাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকায় একটি হোটেলে কাজ করেন রুবেল। তিনি বলেন, মাত্র কিছুদিন আগেই বাড়ি থেকে এসে তিনি কাজ নিয়েছেন। সামনে রমজান ও ঈদ। কিছু টাকা উপার্জন করে পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়েছিলাম। লকডাউনের কারণে এখন কিছুই মাথায় আসছে না। সংসার চালাব কীভাবে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসের মালিক জানান, গতবছর লকডাউনের কারণে অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারা যায়নি। বছর পার না হতেই আবার লকডাউন। এবার পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকার রিকশাচালক জাহিদ বলেন, একদিন রিকশা না নিয়ে রাস্তায় বের হলে বাড়িতে ভাত হয়না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা তৌহিদ হাসান নামে একজন বলেন, আগের লকডাউনে চাকরি হারিয়েছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনভাবে আরো একটি চাকরি জুটিয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে এ চাকরিটা থাকে কি না সন্দেহ। সামনে রমজান ও ঈদ। হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা ১৮ দফায় সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে রাজশাহীর অনেক এলাকায় তা উপেক্ষিত হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব, সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করা নিশ্চিত করা যায়নি।

মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার, লক্ষ্মীপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম। কিছু সময় পরপর মাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু তোয়াক্কা করছেন না কেউ। অনেকের মাস্ক নেমে এসেছে থুতনির নিচে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন না কেউই।

এদিকে ঘোষণা দিয়েই লকডাউন উপেক্ষ করে মঙ্গলবার থেকে দোকানপাট খুলে বসেছেন রাজশাহীর অঅরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন স্বাস্থ্যবিবি মেনেই তারা দোকান খুলবেন। ক্রেতা না আসলেও দোকান খুলে থাকবেন।

রাজশাহী কাপড়পট্টি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামিম বলেন, গত বছর লকডাউনের কারণে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঠিক মতো ঈদ করতে পারেনি। লকডাউন চলছে চলুক, আমাদের দোকান খোলার একটা সময় বেধে দিলে ভালো হবে।

এদিকে সারাদিন হৈ চৈ জনসমাগম ধাকলেও প্রশাসনের তেমন কড়াকড়ি দেখা যায়নি। তবে সন্ধ্যার পরেই মহানগরীর চিত্র পাল্টে যায়। সত্যিকারের লকডাউনের চিত্র দেখা যায় নগরীতে।
প্রথমদিন সন্ধ্যার পরে রাজশাহী মহানগরীতে আসল লকডাউন ফিরে আসে। সন্ধ্যার পরে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তাগুলো ফাঁকা হয়ে আসে। সন্ধ্যার পরে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, শুধু ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য দোকানগুলো বন্ধ ছিল।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকী বলেন, রবিবার রাত থেকেই মার্কেট ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রথম দিনে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে যেন বের না হয়। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে আরও কড়াকড়ি করা হবে।

আরবিসি/০৬ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category