আরবিসি ডেস্ক: দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে; মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে নয় হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ৩৫৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ৫২ জনের।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ১১ হাজার ২৯৫ জনে। আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ৫২ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৯ হাজার ৪৬ জনের মৃত্যু হল। এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা দেশে মহামারী শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর সোমবার প্রথমবারের মত এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর আসে। আর এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। দুই দিনের মাথায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল।
আর দৈনিক মৃত্যুর এই সংখ্যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গতবছরের ২৬ অগাস্ট এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল। সেদিন ৫৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল সরকার। এরপর গত বছরের ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।
গত টানা তিনদিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের উপরে থাকার পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও বেড়ে ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ হয়েছে যা গত ২৪ অগাস্টের পর সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে গত এক দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ২১৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন । তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৯ জন হয়েছে।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১২ কোটি ৮৩ লাখ পেরিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৮ লাখ ৫ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৪৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪০তম অবস্থানে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ২২৪টি ল্যাবে ২৬ হাজার ৯৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৬টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৫ লাখ ১৭ হাজার ১১৩টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১১ লাখ ২৬ হাজার ৬৩২টি। গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ আর নারী ১৪ জন। তাদের প্রত্যেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন।
তাদের মধ্যে ৩০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরে মধ্যে, ৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃতদের মধ্যে ৩৪ জন ঢাকা বিভাগের, ৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন রাজশাহী বিভাগের,৩ জন খুলনা বিভাগের, ২ জন সিলেট বিভাগের এবং ১ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৮ হাজার ৯৯৪ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৮১২ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ২৩৪ জন নারী। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৬০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ২ হাজার ২৩৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১ হাজার ১৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪৪৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৭৮ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬৭ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৮ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
মৃতদের মধ্যে ৫ হাজার ১৫২ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৬৪০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৫০৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৮২ জন খুলনা বিভাগের, ২৭৩ জন বরিশাল বিভাগের, ৩২০ জন সিলেট বিভাগের, ৩৭৪ জন রংপুর বিভাগের এবং ২০১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
আরবিসি/৩১ মার্চ/ রোজি