স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর আরডিএ মার্কেট অবশেষে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মার্কেটটি ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হচ্ছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এই কার্যক্রম শুরু করেছে।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজারে অবস্থিত তিনতলা এই মার্কেটটিতে এখন দুই হাজার ২০০ দোকান। কিন্তু আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকারও জায়গা নেই। ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কেটটিকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। মার্কেটের প্রবেশপথে একটি ব্যানারও টাঙানো হয়। কিন্তু দু’ঘণ্টার মধ্যেই ব্যানারটি উধাও হয়ে যায়। চরম ঝুঁকির মধ্যেই ব্যবসায়ীরা এখনও ব্যবসা করে আসছেন।
মার্কেটটির মালিকানা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ)। ১৯৮৮ সালে এখানে ১৩৭ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দোকান দেয়া হয়। সংস্কারের পর ২০০৬ সালে আবার দোকান বরাদ্দ শুরু হয়। এরপর ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছেই। শহরের সবচেয়ে বড় এই মার্কেটে এখন প্রায় দুই হাজার ২০০টি দোকান রয়েছে। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও মার্কেটটিতে সুযোগ-সুবিধার কিছুই নেই। রয়েছে চরম ঝুঁকি।
তাই গত বছরের ডিসেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ও ভবিষৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এরপর আরডিএ প্রক্রিয়া শুরু করলেও সিটি করপোরেশনের সাথে এখনও আলোচনা হয়নি।
আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, মার্কেটটি ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণের জন্য একটি ডিপিপি প্রস্তুত করা হচ্ছে। ডিপিপি অনুমোদনের পর কাজে আরও গতি আসবে। এরই মধ্যে নগর সংস্থার সাথেও আলোচনা সেরে নেয়া হবে। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরিয়ে সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় করেই দ্রুত কাজটি করতে চায় আরডিএ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আরডিএ মার্কেটের তিনপাশেই সরু গলি রাস্তা। অথচ আরএস রেকর্ড অনুযায়ী রাস্তাগুলোর প্রস্থ ৩০ ফুট। ব্যবসাযী ও ভবন মালিকেরা দখল করে নেয়ায় রাস্তার প্রস্থ কমে এসেছে। এখনও রাস্তাগুলোর ওপরেই ব্যবসা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সামনের দিকে সাহেববাজার প্রধান সড়ক। সামনের দিকে অল্প একটু ফাকা জায়গা রেখে তিনতলা ভবনটি গড়ে তোলা হয়েছে। বিদ্যুৎ গেলেই গোটা মার্কেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। মার্কেটের ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মতো কোন রাস্তা নেই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আরডিএ মার্কেটে অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মার্কেটের আশপাশে কোনো পুকুরও নেই। ফলে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে পানির অভাবে আগুন নেভাতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। এছাড়া মার্কেটটির সিড়িতেও মালামাল রাখা হয়। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজে নামতেও পারবেন না। তাছাড়া মার্কেটের ভেতরে এলোমেলোভাবে রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। ফলে সহজেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব কারণে মার্কেটটিকে দুবছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে মার্কেটটি ভাঙার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হলেও কিছুই জানেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এ ব্যাপারে কিছুই শোনেননি। একজন ছাড়া অন্যসব ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, মার্কেটটিকে তারা ঝুঁকিপূর্ণও মনে করেন না। তাদের কোন সমস্যাও নেই।
মার্কেটের জামাল ক্রোকারিজের মালিক ও ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু জামাল তাপস বলেন, ‘কই মার্কেট ভাঙা হবে এমন কিছু তো শুনিনি। এই মার্কেটে ব্যবসা করতে আমাদের কোন সমস্যাও দেখি না।’ মার্কেটের রয়েল স্টোরের ব্যবস্থাপক আল-আমিন শেখ বলেন, ‘মার্কেট ভাঙা পড়বে এ রকম কিছু শুনিনি। মার্কেট কমিটির লোকজন হয়তো বলতে পারবে। আমরা কিছু জানি না।’
আরডিএ মার্কেটের প্রবেশমুখেই সানন্দা গার্মেন্ট। এর মালিক গোড়াচাঁদ বসাক অবশ্য ঝুঁকির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কেটে সব ছোট ছোট দোকান। আগুন লাগলে বাজে অবস্থায় চলে যেতে পারে।’ গোড়াচাঁদও শোনেননি মার্কেট ভাঙা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পুনর্বাসন বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে মার্কেট ভাঙা ঠিক হবে না। মার্কেট ভাঙার আগে যেন এটি নিশ্চিত করা হয়।’
আরডিএ কর্তৃক পুনর্বাসিত সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘সাহেববাজার প্রধান সড়ক ছিল আমাদের বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি। ওই সড়ক সম্প্রসারণের সময় আমাদের আরডিএ মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়। এখন মার্কেট ভাঙতে হলে আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মার্কেট ভাঙার প্রক্রিয়া চলছে বলে শুনেছি। আরডিএ এখানে বসুন্ধরা মার্কেটের স্টাইলে মার্কেট করতে চায়। কিন্তু এই জায়গায় সেটা সম্ভব না। ওই রকম মার্কেট হলে সব ব্যবসায়ীকেও জায়গা দেয়া সম্ভব হবে না। আমরা বলেছি- মার্কেট ভাঙার কারণে ব্যবসায়ীরা যেন বিপদে না পড়েন।’
জানতে চাইলে আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও জোন-৩ এর অথরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, ‘মার্কেট ভাঙা পড়লে তো ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতেই হবে। আমরা একটা ডিপিপি প্রস্তুত করছি। সেটি অনুমোদনের পর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।’
আরবিসি/৩১ মার্চ/ রোজি