স্টাফ রিপোর্টার : বাগমারা উপজেলার বারনই ও ফকিরানী নদীর সাতটি পয়েন্টে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস অভয়াশ্রম। এসব অভয়াশ্রম দখল করে রেখেছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। তারা কেউ পেশায় শিক্ষক কেউ বা ব্যবসায়ী। অভয়াশ্রম থেকে প্রকৃত মৎসজীবি ও জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন বাদ পড়ায় তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা কামারখালীর বারনই নদীতে মৎস্য অভয়ারণ্য দখল করে সাইন বোর্ড লাগিয়ে সেখানে বাঁশ পুঁতে ও গাছের ডালপালা ফেলে মাছ ধরা হচ্ছে। তাদের মাছ আটকানোর জাল এতটা ছোট যে এ জালে রেণুপোনাসহ মা মাছও ধরা পড়ছে।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক শিক্ষক সমর্থকদের একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওঠেছে তারা কেউ প্রকৃত মৎসজীবি বা জেলে সম্প্রদায়ের নয়। অথচ তারাই সুবিধা ভোগ করছে এসব অভয়াশ্রম থেকে।
সুফলভোগী মৎস্য অভয়াশ্রম সমিতির সভাপতি নাটোর নলডাঙ্গা থানার পিরগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোজাহার আলী এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন, পুঠিয়ার উপজেলার শাহাজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতান মাহমুদ।
তারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে তথাকথিত সমিতির নামে বারনই নদীর মৎস্য অভয়ারণ্য দখল করে মৎস্য শিকার করে যাচ্ছেন। মৎস নিধনকারী এসব সিন্ডিকেটে সংঘবদ্ধ হয়ে ভাড়াটিয়া জেলে দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের অবৈধ কারেন্ট জালে মা ও পোনা মাছ আহরণ করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এভাবে মাছ ধরায় মৎস শূন্য হয়ে পড়েছে বারানই নদীটি। এছাড়া বেশ কয়েকজন সরকারি-বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক এ মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য হওয়ার কারণে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে রামরামা ও কামারখালী গ্রামের কয়েকজন জেলে পরিবারকে এ সমিতিতে রাখা হলেও কার্যত তাদের কোনই সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়না অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বারানই নদীতে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জাল ও বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়। এছাড়া বর্ষা শুরু থেকে উপজেলার তাহেরপুরের বারনই নদীর রামরামা, কামারখালি, শ্রীপুর, বাগমারা, একডালা, মোহনগঞ্জ, মাদারীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে পানির স্রোত বাড়িয়ে তার মুখে স্থাপন করা হয় এক ধরনের কারেন্ট জাল। তাতে আটকা পড়ে শামুক, ঝিনুক, রেণু ও মা-মাছসহ সব ধরনের মাছ।
বর্তমানে অভয়াশ্রম নাম দেওয়া ওইসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা রামরামা-কামারখালী এলাকার বারনই নদীতে কারেন্ট ও বাধাজাল দিয়ে পানির স্বাভাবিক গতি পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সব মাছ তাদের জালে আটকা পড়ছে।
মৎসজীবি সূর্যকান্ত হালদার, নিতাই, কমল, সুধীর, মকবুল, সুশিল, আনান্ত, সুধির ও নারায়ণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক রামরামা কামারখালী মৎস্য অভয়াশ্রম সমিতির সভাপতি মোজাহার আলীর নেতৃত্বে নদীতে বেড়া (বাধা) দিয়ে মাছ ধরায় আমরা তেমন মাছ পাচ্ছি না। কারণ সব মাছ তাঁদের জালে আটকা পড়ছে এবং ফাঁকফোকর দিয়ে যে সামান্য মাছ আসছে তার কিছু অংশ আমরা ধরতে পারছি।
এছাড়া এসব বেড়া ও কারেন্ট জালের কারণে কয়েক বছর ধরে আমরা অতি কষ্টে জীবন-যাপন করছি। এদিকে, স্থানীয় কৃষকরা জানান, আগে এই সময়ে নদীর পানি সম্পর্ণ শুকিয়ে যেত। কয়েক বছর আগে পুঠিয়া উপজেলার জগদেশপুর গ্রামে রাবারড্যাম নির্মানের কারণে এই নদীতে সারা বছর পানি থাকে। ফলে তারা আনায়াসে সেচ কাজ চালাতে পারেন। জেলেরা সারা বছর ধরে নদীতে মাছ শিকার করে জীবন-যাপন করে থাকেন।
কয়েক দিন আগে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় বারনই নদীতে কুচুরিপানায় ভরে যাওয়ার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে মৎস্য অভয়াশ্রম সমিতির সদস্যরা তরিঘড়ি করে মৎস্য অভয়ারণ্য থেকে রাতের আধারে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ মেরে পার্শবর্ত্তী আত্রাই, নলডাঙ্গা আড়তে বিক্রি করে দেয়।
এভাবে প্রকৃত জেলে সম্প্রদায় ও মৎসজীবিদের বাদ দিয়ে তথাকথিত প্রভাবশালী শিক্ষকদের সিন্ডিকেট দিয়ে মৎস অভয়াশ্রমের নিয়ন্ত্রন নিয়ে মাছ বিক্রির টাকা আত্মসাত করায় বঞ্চিত মৎসজীবি ও জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বেড়েই চলেছে। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে প্রকৃত সুফল ভোগিদের কাছে মৎস অভয়াশ্রমের নিয়ন্ত্রন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা রবিউল করিম জানান, মৎস অভয়াশ্রমে নদীর দুই পাশে বসবাসকারী লোকজনকে নিয়ে করা হয়েছে। যারা গরীব এবং নদীর ওপর জীবিকা নির্ভরশীল তাদেরকে অন্তভুক্ত করা হয়েছে। তারপরও কারো কোন আপত্তি থাকলে বা যে কেউ এ প্রকল্পে আসতে চাইলে তাদের ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে।
আরবিসি/৩১ মার্চ/ রোজি