স্টাফ রিপোর্টার : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজশাহীতে আয়োজিত দুই দিনের উন্নয়ন মেলা শেষ হয়েছে। ‘স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচির অধীনে শনিবার থেকে রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে এ মেলা শুরু হয়েছিল। জেলা প্রশাসন এর আয়োজন করেছিল। রোববার রাতে সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। অনুষ্ঠানে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশকে এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ‘মিসকিন’ বলত। কোরবানির ঈদের পর দেশগুলো থেকে দুম্বার মাংস পাঠানো হতো। সেই মাংস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা বিতরণ করত। এসব আমাদের চোখে দেখা। এখন আর সেই দিন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সরকারের আগে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ যতটা না ‘মিসকিন’ ছিল তার চেয়েও বেশি মিসকিন তারা বানিয়ে রেখেছিল। তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিল দেশের উন্নয়নের জন্য নয়, নিজেদের উন্নয়নের জন্য।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশে^র মধ্যে বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, দেশের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। সারাদেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। এভাবেই আমরা আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না।
সেমিনারে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমেরিকার রাজনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করেছিলেন। এখন আমেরিকার একজনও রাজনীতিক পাওয়া যাবে না যিনি বাংলাদেশকে এ কথা আবার বলতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আলাদা অর্থনীতি করেছি। এখন পাকিস্তান আমাদের চেয়ে অনেক অনেক পিছিয়ে। এখন পাকিস্তানের দুই টাকা সমান বাংলাদেশের এক টাকা। যে দেশের মুদ্রার দাম যত বেশি সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত উন্নত। কিন্তু এখনও কিছু মানুষ দেশকে পাকিস্তানের নীতিতে চালানোর স্বপ্ন দেখে। তাদের সেই স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না।
বাদশা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন চেয়েছিরেন দেশ সেভাবেই এগোচ্ছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় এখন একটি উদীয়মান ধ্রুবতারা। পাকিস্তানি চেতনা নিয়ে যারা চলার চেষ্টা করছেন তারা আসলে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। আমরা ২০০৯ সালেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছি। দেশের বাইরে গিয়ে যখন শুনি- এই দেশে বাংলাদেশ চাল রপ্তানি করে তখন গর্বে বুকটা উঁচু হয়ে যায়। দেশের এই অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে দেয়া হবে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে বিরোধিতা প্রসঙ্গেও কথা বলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, দেশে এখন একটা রাজনীতি হয়ে গেল। আমরা বলতে চাই- ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা নির্ধারণ করবে সেই দেশের জনগণ। আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখব। আগের সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে। এতে দেশের ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল থাকলে আমরা আমাদের পণ্যের বাজার পাব। অর্থনৈতিকভাবে দেশ লাভবান হবে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। সেমিনারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনার শেষে মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। মেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ১০০টি স্টলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রদর্শন করা হয়েছে। পুরস্কার বিতরণের পর একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় প্রথম স্থান ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে যথাক্রমে রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।
আরবিসি/২৮ মার্চ/ রোজি