আরবিসি ডেস্ক : দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে, প্রতিদিন বাড়ছে শনাক্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা প্রতিরোধে জনগণ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রতিরোধ জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সংক্রমণ যে হারে দ্রুত গতিতে বাড়ছে এখনি কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ না করলে করোনা ভাইরাসে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপদ ঘটতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সতর্কতার কথা উল্লেখ করে বলেন, উৎপত্তিস্থলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো না গেলে প্রতিদিন করোনা ভাইরাসের রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থায় কুলাবে না।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে গিয়ে বিপদ সীমার (৫ শতাংশ) নিচে চলে এসেছিল। গত ৮ মার্চে সংক্রমণের হার বিপদ সীমার নিচে ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ ছিল। এরপরের দিন ৯ মার্চ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়ে হয় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এরপর থেকে শনাক্তের হার বেড়েই চলেছে। গত ১৮ দিনে সংক্রমণের হার বেড়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
শনিবার (২৭ মার্চ) শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। এদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৮৬৯ জনের। এদিন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৭৪ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৮০৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে শনাক্তের হার যদি ৫ শতাংশের কম থেকে প্রতি সপ্তাহে দেড়গুণ করে বাড়তে থাকে এবং সেই হার যদি ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে সেটাকে করোনার ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলা যায়। সেই হিসেবে দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং সংক্রমণের হারও বর্তমানে অনেক বেশি।
যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে কতটা ঝুঁকির দিকে আমরা যাচ্ছি এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, বেশ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছি আমরা; এটা চিন্তার বিষয়। সামগ্রিকভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সেটা হ্যান্ডেল করার সক্ষমতা আমাদের দেশে নেই। যেখানে অনেক উন্নত দেশও কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। কোনো সন্দেহ নাই করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা প্রবেশ করেছি। এখনও যদি আমরা জনগণ এবং সরকার বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন না করি, তাহলে ভবিষ্যতে অনেক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
বর্তমানে সময়ে চলমান করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলাও করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। শুধু আইন প্রয়োগ করে নয়, আমাদের প্রয়োজন ব্যাপক জন সম্পৃক্ততা। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি অতি সংক্রমনশীল স্থান (সুপার স্প্রেডারার ইভেন্ট) যেমন জনসমাগম স্থলগুলোতে সভা সমাবেশে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন এবং বিধি নিষেধ আরোপ করতে হবে। করোনা শনাক্তের সংখ্যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে, না হলে সবদিক থেকেই বড় ধনের ক্ষতি হয়ে যাবে। করোনা ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে আমাদেরকে জন সম্পৃক্ততাসহ, জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, খেলোয়াড়, গণমাধ্যম কর্মী, সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজন সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে।
আরবিসি/২৭ মার্চ/ রোজি