• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ অপরাহ্ন

সব সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি বাদশার

Reporter Name / ১৪৭ Time View
Update : বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এ সমস্ত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সুনামগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং হামলায় উস্কানিদাতা হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের দাবিতে রাজশাহীতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিনি এ দাবি জানান। বুধবার বিকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এর আয়োজন করে।
ফজলে হোসেন বাদশা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছে। প্রত্যেকটি ঘটনারই বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।

তাদের বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। বাদশা বলেন, ‘দেশে যদি সাম্প্রদায়িকতা যদি হয়, এর বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেয়া হবে। সরকারের দায়িত্ব পাল্টা জবাব দেয়ার। সরকার যদি না পারে, তাহলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও ত্যাগ করিনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও ত্যাগ করিনি। আমরা লড়াই করতে জানি। লড়াই চালিয়ে যাব।’

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিরঙ্কুশভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নির্বাচিত হয়েছি। এরপর থেকে বার বার হেফাজত, জামায়াত এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি বিদেশীদের প্ররোচণায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেশের অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছে। বার বার সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। সংখ্যালঘু আদিবাসী পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু সরকার সুনির্দিষ্টভাবে দায়ীদের চিহ্নিত করতে পারছে না। সুনামগঞ্জে যা হয়েছে তা নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। যুবলীগের নাম উঠে আসছে। তাহলে সেই যুবলীগে হেফাজত কী করে ঢুকল, এটা আওয়ামী লীগকে দেখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু দিন আগে বলেছিলেন, অনেক জামায়াত-বিএনপি এবং হেফাজত আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। হাইব্রীড ঢুকে পড়েছে। স্বাধীনতার শত্রুরাও যদি আমাদের মিছিলে ঢুকে পড়ে তাহলে দেশের জনগণ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। তাই স্পষ্ট করে বলতে চাই- এই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে, যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় আক্রমণ করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য একটা বিশেষ উদ্যোগ নেয়া দরকার। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- অনতিবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। এই বাংলাদেশে যারা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষবাস্প ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। এর কোন বিকল্প নেই।’

রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আজকে কিছু শক্তি বিভিন্ন শক্তির মদদে এই দেশকে আবারও পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যেতে চায়। দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সকল জাতি, সকল ধর্ম এবং বর্ণের মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধু সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু এখন একটা নতুন ষড়যন্ত্রের উত্থান হচ্ছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ধারা অব্যাহত থাকুক এটা তারা চায় না। বাংলাদেশকে তারা আবার পাকিস্তান বানাতে চায়। আমরা পাকিস্তানের টেলিভিশন খুলে দেখেছি। পাকিস্তানের জনগণ বলে- আমাদের সামরিক শক্তিকে পরাভূত করে যে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করেছে সেই দেশ আজকে পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত।

আজকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। বিশে^র মানচিত্রে বাংলাদেশ ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল একটি রাষ্ট্র। এটা সম্ভব হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের কারণে। বাংলাদেশের যে সম্ভবনা সেটাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য একটা কুচক্রি মহল সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চায়। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য কাটছাঁট করার সমালোচনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চার মূলনীতির ওপর বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার মধ্যে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধু নিজেই পার্লামেন্টে চার মূলনীতি ব্যাখা করেছে। যেদিন এই সংবিধান পাস হয় সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমার জীবদ্দশায় যদি চার মূলনীতি বাস্তবায়িত না হয়, আমার মৃত্যুর পরও যদি বাস্তবায়ন হয়, আমার আত্মা শান্তি পাবে।” এই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে আমার প্রশ্ন, বাংলার মানুষ কী এই সাম্প্রদায়িকতা চেয়েছিল? আমরা কী শান্তিতে আছি? আমরা যদি শান্তিতে না থেকে থাকি তাহলে এর জন্য কারা দায়ী? পার্লামেন্টে দেখলাম- বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য কাটছাঁট করে চার মূলনীতিকে দুই মূলনীতি বানিয়ে দেয়া হলো। কারা বানালো? পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য বিকৃত করে কারা প্রচার করে? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন ক্ষমতা কি সরকারের নাই? সরকারকে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে আজ যদি রাজনীতি না হয়, রাষ্ট্র যদি গড়ে না ওঠে, চেতনাবিরোধী শক্তি যদি সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে ঢুকে পড়ে তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ কোনদিন প্রতিষ্ঠিত হবে না।’

চার মূলনীতির সঙ্গে কোন আপস নেই জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “চার মূলনীতিকে কেউ খাটো করে দেখবেন না। এই সংবিধান শুধু কলমের কালি দিয়ে লেখা নয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধান।” এই সংবিধানকে যদি আমরা রক্ষা করতে না পারি তাহলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়াবেই, এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক। সরকারকে বলতে চাই- বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কোন আপস নেই। আপস চলবে না। আপস নীতি ও শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। আপস বাংলাদেশকেও দুর্বল করে ফেলবে, যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে আমরা সরে আসি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থেকে বলতে চাই, চেতনা আর আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্য চাই। অন্য কোন ঐক্য বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কার্স পার্টি আদর্শে বিশ^াস করে। আমরা শ্রমিকের পাটকল খুলে দেয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করি। তাদের চাকরির জন্য আমরা আন্দোলন করি। আমরা দেখি- রাজশাহীতে চিনিকলও বন্ধ হয়ে যায়। আখচাষীদের জন্য আমরা সংগ্রাম করি। একদিকে বাংলাদেশের পতাকা, অন্যদিকে গরীব মানুষের লাল পতাকা। দুই পতাকা নিয়েই আমরা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবুর পরিচালনায় কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন নগর সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য এন্তাজুল হক বাবু। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন- কবিকুঞ্জের সভাপতি রুহুল আমিন প্রামানিক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহানগরের সভাপতি ড. সুজিত সরকার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, রাজশাহী থিয়েটারের আহ্বায়ক নিতাই কুমার সরকার, ছাত্রনেতা তামিম শিরাজী প্রমুখ।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, নগর সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য সাদরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ, সিরাজুর রহমান খান, আবদুল মতিন, মনির উদ্দিন পান্না, নাজমুল করিম অপু, সদস্য সীতানাথ বণিক, অসিত পাল, মোশাররফ হোসেন, আলমগীর হোসেন আলম, সাঈদ চৌধুরী, যুবমৈত্রীর নগর সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক বকুল, ছাত্রমৈত্রীর নগর সভাপতি অহিদুর রহমান ওহি প্রমুখ।

আরবিসি/২৪ মার্চ/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category