• বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নের ভান্ডার রাবির ‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’

Reporter Name / ২০০ Time View
Update : বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটক পেরিয়ে জোহা চত্বর। জোহা চত্বর থেকে ডান দিকে প্যারিস রোড ধরে এগোতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এর পাশেই অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন উপকরণ ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে গড়ে ওঠা ‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’।

১৯৭৬ সালের ৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই সংগ্রহশালাটি। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষকদের পত্নী বেগম ওয়াহিদা রাহমান, বেগম মাস্তুরা খানম ও শ্রীমতী চম্পা সমাদ্দার ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এর স্থায়ী প্রদর্শনী গ্যালারি উদ্বোধন করেন।

সংগ্রহশালাটির প্রবেশমুখে দেখা যাবে একটু উঁচু মঞ্চে দাঁড় করানো মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত সবুজ রঙের একটি বিধ্বস্ত গাড়ি। দৃষ্টিনন্দন একতলাবিশিষ্ট সংগ্রহশালাটির বারান্দায় দেখবেন ৭ মার্চের ভাষণদানরত বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র। ৬ হাজার ৬০০ বর্গফুট আয়তনের সংগ্রহশালাটিতে আছে মোট ৩টি গ্যালারি। মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি দিয়ে সাজানো এই গ্যালারিগুলোতে স্থান পেয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধে শিক্ষক, ছাত্র এবং কর্মচারীদের স্মৃতিচিহ্ন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোকচিত্র, শহীদদের প্রতিকৃতি, কোলাজ, ভাস্কর্য ও বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি।

সংগ্রহশালাটি ঘুরে দেখা যায়, প্রথম গ্যালারিতে রয়েছে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্মিত রাজশাহীর প্রথম শহীদ মিনারের ছবি এবং রাজশাহীতে উত্তোলিত প্রথম জাতীয় পতাকাটি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ ড. শামসুজ্জোহার বিভিন্ন ছবি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন পোশাক ছাড়াও এখানে রয়েছে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আলোকচিত্র, নিহত শহীদ আসাদের কিছু দুর্লভ ছবি, বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি।

দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও পোশাক। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রতীকী ভাস্কর্য, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর ছবিও এই গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে। রাজশাহীর শহীদ সিদ্ধার্থ সেন, ডা. মিহির কুমার সেন, ডা. হুমায়ুন কবির, আইনজীবী নাজমুল হক সরকারসহ আরো অনেকের ছবি রয়েছে এখানে। একাত্তরের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের কিছু দুর্লভ ছবি স্থান পেয়েছে এই গ্যালারিতে।

তৃতীয় গ্যালারিতে রয়েছে একাত্তরের গণহত্যায় নিহত শহীদদের মাথার খুলি আর হাড়; যার বেশির ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পাশে অবস্থিত গণকবর থেকে। অপরদিকে গ্যালারির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোকচিত্র। রয়েছে একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন আলোকচিত্র ও বিজয়ী মুক্তিসেনাদের ছবি।
সংগ্রহশালা সূত্রে জানা যায়, সংগ্রহশালাটিতে আলোকচিত্র ২৭৯টি, প্রতিকৃতি ৪২টি, কোলাজ ২টি, শিল্পকর্ম ২৮টি, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু ১৬২টি, ভাস্কর্য ১০টি, ডায়েরি ও অন্যান্য পাণ্ডুলিপি ৪৯টি এবং বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র রয়েছে ২২টি।

সংগ্রহশালাটির কিউরেটর ড. শফিকুল ইসলাম জানান, সংগ্রহশালাটি সবার জন্য উন্মুক্ত। করোনাকালের আগে শুক্র ও শনিবার ব্যতীত অন্যান্য দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংগ্রহশালাটি খোলা থাকত। সে সময় প্রতিদিন গড়ে দেশ ও দেশের বাইরের মিলিয়ে আড়াই’শ থেকে তিন’শ দর্শনার্থী সংগ্রহশালাটিতে ভিড় জমাতেন। করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে সংগ্রহশালাটি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এছাড়া বিশেষ দিবসগুলোতে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে দৈনিক গড়ে দেড়’শ থেকে দুই’শ জন দর্শনার্থী সংগ্রহশালাটি পরিদর্শনে আসেন।

আরবিসি/২৪ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category