• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন

আবারও উত্তপ্ত সন্ত্রাসের জনপদ মর্দানা

Reporter Name / ১৩৫ Time View
Update : বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থগিত হওয়া শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান কাউন্সিলর ও আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী খাইরুল আলম জেম চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ প্রতিপক্ষ গ্রুপের কতিপয় ব্যক্তিকে নির্বাচন সুষ্ঠ না হবার জন্য দায়ী করে একটি অভিযোগ দেন নির্বাচন কমিশন বরাবর।

এসময় তিনি নিজের ও তার সমর্থকদেও জানমালের নিরাপত্তা হীনতার জন্য ওদেরই দায়ী করেন। আর এ অভিযোগ দেয়ার ২ দিনের মাথায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসের জনপদ খ্যাত মর্দানা গ্রাম। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭০টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে ২৪ ককটেল। এতে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে বিচ্ছিন্ন ওই গ্রামটিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মরদানা গ্রামে বুধবার দুপুরে পুলিশের টহল লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট ফাঁকা এবং অনেকটা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায় গেল একবছর আগে পালিয়ে থাকা অর্ধশত মানুষ নিজ গ্রাম মর্দানায় প্রবেশ করলে সন্ধার দিকে উটপাখি প্রতীকের প্রার্থীর গোলাম আজমের সমর্থকরা তাদের উপর ধাওয়া করে। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকরা ককটেল ফাটিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে। পরে পালিয়ে থাকা লোকজন উটপাখি প্রতীকের সমর্থকদের গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে দেয়। এসব ঘটনায় একপক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করছে।
উটপাখি প্রতীকের প্রার্থী গোলাম আজম জানান, প্রতিপক্ষ পানির বোতলের প্রার্থী খাইরুল আলম জেমের বেশ কয়েকজন সমর্থক ককটেল ফটিয়ে এলাকায় বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

কয়েকজন সাধারণ ভোটার নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, বিগত ১৫ বছর ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলে আসছে মর্দানা গ্রামে। এসময় সহিংসতায় অন্তত ৬ জন নিহত ও শতাধীক ব্যক্তি আহত হয়েছে। অসংখ্য বাড়ী ঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। এ গ্রামে বসবাসরত সাধরণ মানুষ সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাইনা। মুখ খুললেই নেমে আসে ভয়াবহ নির্যাতন। স্বীকার হতে হয় মামলা ও হয়রানিতে।

এ ব্যাপারে সাধারণ কাউন্সিলর পদের উটপাখি প্রতিকের প্রার্থী গোলাম আজম অভিযোগ করে বলেন, একাধীক মামলা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল বর্তমান কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম। সোমবার নির্বাচন কমিশনে একটি মনগড়া অভিযোগ দিয়ে সে অভিযোগটি প্রতিষ্ঠিত করতেই মঙ্গলবার জেম তার নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে শো-ডাউন দিতে দিতে এলাকায় ঢুকে এবং একাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

অপরদিকে প্রতিপক্ষ পানির বোতলের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে একটি পক্ষ হামলা ও ককটেলবাজি করে আমার উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। আমি বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি রয়েছি। তিনি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ হোসেন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। সেখানে বিপুল পরিমান পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বোমাবাজির ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। কাউকে আটক করা যায়নি।
এদিকে বর্তমান কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম তাদের পরিবার, সমর্থক, ভোটার ও গ্রামবাসীর জান-মালের নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর সোমবার এক পত্র দিয়েছেন। প্রতিপক্ষ গ্রুপের কয়েকজনের সাথে বর্তমান জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকেও আসন্ন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিকার চেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর পত্রটি দেন।
চিঠিতে কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পৌরসভার তার ওয়ার্ডের দুটি ভোট কেন্দ্র ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়ে বলেন মর্দনা ও এর আশেপাশের গ্রামে হিন্দুদের ট্রাস্টের দেবত্তর সম্পত্তির ভোগদখল নিয়ে মামলা-হামলার জেরে ৫টি হত্যাকান্ড হয়েছে। এছাড়াও গত ৭ মাসে ০৯ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকশ লোক নিজ গ্রাম ছেড়ে পাশের কয়েকটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। হামলা, মামলার আতঙ্ক হতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে চলেছে হামলা, হুমকি, কৃষি ফসল ও ঘরবাড়ি লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশের এডিশনাল এসপি মাহবুব আলম এইসব চিহ্নিতদের পর্দার অন্তরালে থেকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা, কুপরামর্শ দিয়ে আমাকে ও আমার সমর্থকদের নির্বাচনের বাইরে রেখে এক তরফা ও পেশিশক্তি নির্ভর নির্বাচন করতে চাচ্ছে।
পত্রে তিনি আরো বলেন, আমি ও আমার সমর্থক ও পরিবারের সকল সদস্য উদ্বেগ ও শঙ্কা নিয়ে বসবাস করছি। এ নির্বাচনকালীন সময়ে আমার এবং সমর্থক ও পরিবারের কোন সদস্যর প্রাণহানিসহ কোন ঘটনার সম্মুখীন হলে তার জন্য দায়ী থাকবে এডিশনাল এসপিসহ চিহ্নিত ব্যক্তিরা। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে অবিলম্বে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও উৎসবমুখর করতে, সকল ভোটার ও প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান জানান, পত্রের প্রেক্ষিতে আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন দুটি ভোট কেন্দ্রে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, গ্রাম পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিক্তিহীন। অভিযোগের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেয়। এমনকি পত্রটিতে যাদের সাথে আমার যোগসাজশের অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের কাউকেই আমি চিনি না।
শিবগঞ্জ পৌরসভায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হলেও ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুস সালামের মৃত্যু জনিত কারণে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করে ৩১ মার্চ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। তবে ওই নির্বাচনে মেয়র ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়।

আরবিসি/২৪ মার্চ/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category