আরবিসি ডেস্ক : মুশফিকুর রহিম রান করতে পারলেন না, চাপে ফেললেন ডট বল খেলে, ক্যাচ ফেলে নিউজিল্যান্ডকে করলেন চাপমুক্তও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ রিপোর্টই পড়ছেন আপনি, বাংলাদেশ যে ম্যাচ হেরেছে পাঁচ উইকেটে। ক্রাইস্টচার্চে গ্যালারি নেই, মাটিতে বসে খেলা দেখছেন দর্শকরা। বেশির ভাগই স্বাগতিকদের পক্ষে, কিছু কিছু বাংলাদেশের।
তাদের যতটুকু হতাশায় পোড়ানো কিংবা নির্ভার করার বেশির ভাগটাই যেন করলেন মুশফিকুর রহিমই। পেসারদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ করলেন, ডট বল খেললেন অনেক। শেষে এসে আউট হলেন অসময়ে, সেট হওয়ার পর খুবই বাজেভাবে।
আগের ম্যাচের তিক্ত স্মৃতি এখনো টাটকা। দেশে টালমাটাল ক্রিকেট অঙ্গন। নিউজিল্যান্ডে একটা জয় পেলে কি হতো ভাবা যায়? সেটা বোধ হয় ভেবেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। শুরুটা অবশ্য করেছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। লিটন দাস নামের আশার প্রদীপ জ্বলেনি আজও, নিউজিল্যান্ডে কখনোই।
তিনি শূন্য রানেই সাজঘরে চলে গিয়েছিলেন দলকে ৪ রানে রেখে। অধিনায়ক তামিম খেললেন তার স্বভাবসুলভাবে, ফিফটির আগ পর্যন্ত। ডট বল খেললেন, রানও করলেন। তারটা ক্রাইস্টচার্চের দাবি মেটালো ভালোভাবেই। ছুঁলেন মাইলফলকও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিফটির ফিফটি আছে কেবল সাতজন ওপেনারের, তামিম তাদের একজন হয়ে গেলেন। বাংলাদেশে অবশ্যই তিনি এই কৃতিত্বে প্রথম।
তবে তার দারুণ ইনিংস যখন বাংলাদেশকে পথ দেখাচ্ছে ভালোভাবেই, তামিমের সেঞ্চুরির অপেক্ষায় প্রহর গোণা শুরু হয়েছে। তখন তিনি ফিরলেন ‘বোকামি করে’। বলটা পড়ে ছিল স্টাম্পের কাছে, তামিম ছিলেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে। তার ডাকেই দৌড় শুরু হলো, তামিম পৌঁছানোর আগেই ফুটবলের মতো শটে স্টাম্প ভেঙে দিলেন জিমি নিশাম।
তাতে অপমৃত্যু হলো ১৩৬ মিনিটের দারুণ এক ইনিংসের, ফিফটি পেরোনোর পর যেটি হয়ে ওঠেছিল দৃষ্টিনন্দন। ১১ চারে ১০৮ বলে ৭৮ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তামিম। অধিনায়কের সঙ্গে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তার যেন ব্যাটে-বলে হলো না কিছুই। ডট খেললেন প্রচুর। ৫৯ বলে ৩৪ রানের ইনিংসটি যখন বড় করার পালা, তখন তিনি আউট হয়ে গেছেন হেনরি নিকলসের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে।
যা করার করলেন মোহাম্মদ মিঠুনই। আগের দিন বলেছিলেন ‘ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে’। সব দায়িত্ব যেন এদিন নিয়ে নিলেন তিনি। উইকেটের চারপাশে শট খেললেন, নিলেন ‘ক্যালকুলেটিভ রিস্ক’। ইনিংস শেষে অপরাজিত থাকলেন ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৭ বলে ৭৩ রান করে। তাতে বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারিয়ে পায় ২৭১ রানের সংগ্রহ।
জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে ভালোভাবেই চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। প্রথম আঘাতটা হেনেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। মার্টিন গাপটিলকে কট অ্যান্ড বোল্ডে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছিলেন ২০ রানে। এরপর হেনরি নিকলসের পর উইল ইয়ংকে সাজঘরে ফিরিয়ে দারুণ কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন আগের ম্যাচে অভিষিক্ত মেহেদী হাসান।
কিন্তু ডেভেন কনওয়ে আর অধিনায়ক টম লাথামের ১১৩ রানে জুটিতে বাংলাদেশের আশা শেষ হয়। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে অধিনায়ক ল্যাথাম করেন ১০৮ বলে ১১০ রান। তাতে বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয় পাঁচ উইকেটে। নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো তাদের মাটিতে হারিয়ে ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের।
চারপাশের টালমাটাল অবস্থার ভেতরে মাঠের ক্রিকেটটা প্রায় ভুলতে বসেছেন সবাই। মোহাম্মদ মিঠুনের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, তামিমের মাইলফলক কিংবা মেহেদীর ঝলক। ছোটো ছোটো প্রাপ্তি পাওয়া গেল অনেক, কেবল জয়টা ছাড়া। কিন্তু আগুনে পানি ঢালতে যে জয়টা বড্ড দরকার ছিল!
আরবিসি/২৩ মার্চ/ রোজি