স্টাফ রিপোর্টার : পাকা গৃহনির্মাণ কিংবা অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণের অন্যতম ইট। তবে এই ইট তৈরিতে নেয়া হচ্ছে কারসাজি। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে চলছে ইট তৈরীর বিশাল যজ্ঞ। আব্দুস সোবহান মোল্লা নামের এক ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছেন এই ইটভাটা। এখনে উৎপাদিত ‘এএসএম’ নামের ইট পরিমাপে ছোট তৈরী করা হচ্ছে। ফলে এসব ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। একই অবস্থা উপজেলার অধিকাংশ ভাটার ইটের পরিমাপের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার শুধু বাগমারা উপজেলায় ছোট বড় মিলে ৬৪টি ইটভাটি রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে ভাটি মালিকরা মানহীন ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরী করছেন। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ ভাটা মালিকদের কারসাজিতে অতিরিক্ত দামে ইট কিনে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ইমারত নির্মাণ কাজে নিয়োজিতরাও ইটের পরিমাপ ছোট হওয়ায় বিব্রত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী নিয়ম অনুসারে প্রতিটি ইটের পরিমাপ হবে দৈর্ঘ ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৫ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৩ ইঞ্চি। অথচ ভাটি মালিকরা ওই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের ইচ্ছেমত ইট তৈরি করছেন। কয়েকটি ভাটির ইট মাপ করে দেখা গেছে, দৈঘ্য ১০ এর পরিবর্তে সাড়ে ৯ ইঞ্চি, প্রস্ত ৫ এর পরিবর্তে সাড়ে ৪ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৩ এর পরিবর্তে পৌনে ৩ ইঞ্চি করে তৈরি করা হয়েছে।
বাগমারা উপজেলার রামরামা গ্রামের ইট ক্রেতা আলাল উদ্দিন খরাদি জানান, সম্প্রতি এএসএম ভাটা থেকে তিনি ছয় হাজার এক নম্বর ইট কিনেছেন। এক হাজার ইটের দাম সাত হাজার ২০০ টাকা দরে তিনি ইট কিনেছেন। কিন্তু ইট বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখা যায় পরিমাপে কম। এই ইট কিনে তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান।
এএসএম ভাটার ইট তৈরির একজন কারিগর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাটা মালিকরা আমাদের যে ফর্মা দিচ্ছেন আমরা সে ভাবেই ইট তৈরি করে আসছি। প্রতিটি ইটের ফর্মার দু’দিকের আকারে হাফ ইঞ্চি ছোট করা আছে। এর ফলে এক হাজার ইট তৈরির মাটিতে ৬০ পিস অতিরিক্ত তৈরি হয়।
এএসএম ইটভাটি দেখাশোনা করেন আব্দুস সোবহান মোল্লার ছেলে মকবুল হোসেন। পরিমাপে ছোট ইট তৈরীর বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে ইট পরিমাপে ছোট তৈরী করার বিষয়টি অস্বীকার করেন বাগমারা ইটভাটি মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমানে ইটের বাজারও প্রতিযোগিতার বাজার। কেউ যদি ইট ছোট তৈরী করে তবে তার ইট গ্রহকরা কেন কিনবে। মাপ দেখেই গ্রাহকরা ইট কেনে বলে জানান তিনি।
এদিকে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলাতে ১৪টি ইটভাটি চালু রয়েছে। এসব ভাটিতেও ইট তৈরীতে সরকারী নিয়ম অনুসার করা হচ্ছে না।
পুঠিয়া উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন বলেন, বিগত দিনে দু-একটি ভাটির ইট সাইজে ছোট তৈরি হতো। গত দুই বছর থেকে সকল ভাটা মালিকরা পরিমাপে কম করে একই মাপের ইট তৈরি করছে।
পুঠিয়া উপজেলা ইটভাটি মালিক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দীন মন্ডল বলেন, আমরা ইট কাঁচা অবস্থায় সঠিক মাপে তৈরি করি। পোড়ানোর পর সাইজ কি হলো সেটা দেখার বিষয় নয়। ক্রেতারা পছন্দ হলে নিবেন না হলে নয়। আমরা ক্রেতাদের জোর করে দিচ্ছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, ভাটিগুলো ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ইট তৈরিতে পরিমাপ কম দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। যারা এই কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই মাঠে নামা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, রাজশাহীতে নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরী হচ্ছে। এ সব ইট কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদফতর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়না।
রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদফতরের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, মান সম্পন্ন মাটি দিয়ে সঠিক পরিমাপে ইট তৈরীর জন্য সকল ভাটা মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া আছে। নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরী দন্ডনিয় অপরাধ। এ নিয়ে তাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
আরবিসি/২২ মার্চ/ রোজি