• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন

দেশে করোনার ৩৪টি ‘ইউনিক মিউটেশন’ শনাক্ত

Reporter Name / ২৮১ Time View
Update : সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : বাংলাদেশে সার্স কভ-২ এর জিনোমে পাওয়া গেছে নতুন ধারার পরিবর্তন। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসের জিনোমে দেখা গেছে ৪৬০৪ রকমের ভিন্নতা। পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায়নি, প্রথমবারের মত দেশে এমন ৩৪টি ইউনিক মিউটেশনের (নতুন ধারার পরিবর্তন) শনাক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের গবেষকরা এ মিউটেশনগুলোর নাম দিয়েছেন ‘বাংলা মিউটেশন’। এ বাংলা মিউটেশনের সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র পরিবর্তন দেখা গেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে। দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ‘বাংলাদেশে করোনার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক জিনগত পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উদঘাটন করেন।

জানা যায়, গবেষকগণ দেশের ৩৭১ জনের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে ‘গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ শীর্ষক তথ্য বিশ্লেষণ করেন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’ এবং নেদারল্যান্ডসের ‘ভাইরাস রিসার্চ’ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. মাহবুব হাসান, ড. আদনান মান্নান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) শিক্ষক রাসেল দাশ।

গবেষণা তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এস এম মাহবুবুর রশিদ ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকি। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে ছিলেন মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হামিদ হোসাইন ও নাজমুল হাসান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন, রাশেদুজ্জামান ও মেহেদী হাসান। গত বছরের এপ্রিল-ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ডাটাবেস ‘গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’ এ জমাকৃত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে গবেষণায় বাংলাদেশী সার্স কভ-২ এর জিনোম বিন্যাসের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সার্স কভ-২ এর জিনোম সিকুয়েন্সের তুলনা করা হয়েছে।

বায়োইনফরমেটিক্স ও কম্পিউটেশনাল বায়োলজির বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে ভাইরাসের ডি ৬১৪জি অংশের মিউটেশন বা পরিবর্তন যেখানে যেখানে দেখা গেছে, সেসব জায়গাতেই জিনগত পরিবর্তনের হার অনেক বেশি। এই পরিবর্তনটিই হয়তো ২০২০ সালের মাঝামাঝি দেশে সংক্রমণের হার বেশি থাকার অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়াও নন-স্ট্রাকচারাল প্রোটিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র জিনগত পরিবর্তন পাওয়া গেছে বাংলাদেশে।

গবেষকদলের প্রধান ড. আদনান মান্নান বলেন, ‘এ মিউটেশন বা জিনগত ভিন্নতার কারণে ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতায় কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিশেষ উপসর্গের পিছনে এরকম ইউনিক বা বাংলাদেশে স্বতন্ত্র মিউটেশনগুলো দায়ী কিনা, কিংবা এ ধরনের মিউটেশন থাকলে রোগীরা উপসর্গবিহীন হয় কিনা সেটাও দেখা প্রয়োজন। কারণ ‘নিউ মাইক্রোবস এন্ড নিউ ইনফেকশন’ নিবন্ধে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশে আনুপাতিকহারে উপসর্গবিহীন কভিড-১৯ এর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই দেশের নতুন জিনগত মিউটেশনগুলোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি উদ্ভাবিত ও প্রয়োগকৃত টিকা কার্যকর কিনা সেটা গবেষণা করা জরুরি।

ইউএসটিসি’র শিক্ষক রাসেল দাশ বলেন, ‘গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হল, বাংলাদেশের ইউনিক মিউটেশনগুলো খুব অঞ্চলভিত্তিক। যেমন কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু জেলা বা অঞ্চলেই দেখা গেছে। ঢাকায় তিনটি সুনির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন দেখা গেছে, যেটা শুধু ঢাকার রোগীদের মধ্যেই ছিল, অন্য কোথাও দেখা যায়নি। একইভাবে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশাল, যশোর, মৌলভীবাজার ও ময়মনসিংহতে এরকম একদমই নিজস্ব জেনেটিক ভিন্নতা ছিল। এক্ষেত্রে সেসব জেলার ভৌগলিক অবস্থান, জীবনযাপন এবং পরিবেশগত নিয়ামকগুলো হয়তো ভাইরাসকে বদলে দিতে ভূমিকা পালন করছে।’

গবেষণার সমন্বয়কারী চবি শিক্ষক মাহবুব হাসান বলেন, ‘এতগুলো ইউনিক মিউটেশন থাকলে দেশে নতুন কোনো ভেরিয়েন্ট বা প্রকরণ উদ্ভব হওয়ার খুব বড় একটা সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে গবেষণাগারে দ্রুত এসব মিউটেশন বহন করা ভাইরাসগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। দেখা উচিত তা কি ব্রিটিশ কিংবা আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট’র সদৃশ বাংলাদেশি বা বাংলা ভেরিয়েন্ট’র মত কোন নতুন প্রজাতির ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা। দিলেও আদৌ তা সংক্রমণশীল কিংবা ভয়াবহ কিনা।

গবেষণায় বলা হয়, দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন ধারার জিনগত পরিবর্তন তথা ইউনিক মিউটেশন পাওয়া যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে (৩টি করে)। সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় জিনোম সিকুয়েন্স পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এখানে একই সঙ্গে সৌদিআরব তথা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাইরাসের জিনোমগুলোর মাঝে মিল পাওয়া গেছে। দেশে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ অঞ্চলের সদৃশ জিনোম সিকুয়েন্সের ভাইরাস। এছাড়াও পৃথিবীব্যাপী সার্স কভ-২ এর যে পরিবর্তনটিকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সচেয়ে শক্তিশালী ও সংক্রমণশীল বলে বিবেচনা করা হয়েছে, সেই জি ৬১৪ডি মিউটেশন ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশী সিকুয়েন্স এর মধ্যেই ছিল।

আরবিসি/২২ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category