নওগাঁ প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত দুর্লভ ডেওয়া ফল যা বন কাঁঠাল হিসেবে পরিচিত। দেখতে অদ্ভুত টক -মিষ্টি স্বাদে গন্ধে সবার পছন্দ এই ফলটি। ডেওয়া বা বন কাঁঠাল ফলের গাছ ছোট বয়সে অনেকেই দেখছেন।
বহুবছর পর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাঁচুর মোড়ে জহুরুল ইসলামের বাড়ির আঙিনাতে দেখা মিলল একটি গাছে সবুজ পাতার ডালে ডালে হলুদ রঙের ফল। নওগাঁতে এখনও বন কাঁঠালের গাছ আছে। তা কাঁঠাল গাছের মতই বড় সড়। ফল ধরার আগে দেখে বোঝার উপায় নেই। গাছের আকার বড় কিন্তু ফল বেশ ছোট। খোসাটা বেশ পাতলা। এর শাঁসগুলো বেশ ছোট। তরুণ প্রজন্ম অনেকেই শুধু কাঁঠালের কথা জানেন।
কিন্তু বন কাঠাঁলও যে রয়েছে তা খুব কম মানুষেই জানেন। গ্রাম-বাংলায় বন ধ্বংসের কারণে এই বিশেষ ডেওয়া বা বন কাঁঠাল কিন্তু দুর্লভ হয়ে পড়ছে। গ্রামগঞ্জে পাওয়া গেলেও শহুরে মানুষের কাছে এ বন কাঁঠালের কদর কম এর আকার ছোট বলে। তবে গ্রামের মানুষ এই বন কাঁঠালের কদর জানেন। গ্রীষ্মকালীন ফলের পাশাপাশি বাজারে দেখা মিলে প্রায় বিলুপ্ত এই ডেওয়া বা বন কাঁঠালের।
বন কাঁঠাল বা ডেওয়া গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট, বড় আকারের বৃক্ষ। প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়। এর ছাল ধূসর-বাদামী রঙের। গাছের ভেতর সাদাটে কষ বা আঠা থাকে। পাতা ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া হয়। যা অনেকটা কাক ডুমুরের পাতার ন্যয়। তবে আকারে সামান্য বড়। স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা। স্ত্রী ফুল আকারে বড় ও মসৃণ।
এর ফুলে পাপড়ি নেই, ছোট গুটির মত। স্ত্রী ফুল থেকে ফল হয়। ফল কাঁঠালের ন্যায় যৌগিক বা গুচ্ছফল। বহিরাবরণ অসমান। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে বহিরাবরণ হলুদ। ভিতরের শাঁস লালচে হলুদ। প্রতিটি শাঁসের মধ্যে একটি করে বীজ থাকে। সাধারণত মার্চ মাসে ফল আসে এবং মে মাসের দিকে ফল পাকতে শুরু করে। গাছ রোপনের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। দেখতে অদ্ভুত ও খেতে টক -মিষ্টি। স্বাদে গন্ধে ডেওয়া ফল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
পাশাপাশি এর রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণ। অনিয়ন্ত্রিত ওজন বর্তমান সময়ে একটা বড় সমস্যা। অথচ ঠান্ডা পানিতে ডেওয়া ফলের রস মিশিয়ে নিয়মিত পান করলেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এমনকি ডেওয়া ফল রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। মুখের রুচি ফেরাতে খেতে পারেন এই ফল। ডেওয়া ফলের রসের সঙ্গে সামান্য লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেলে মুখে রুচি ফিরে আসবে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, মধুর অম্লরস যুক্ত পাকা ডেওয়া অরুচি ও পেটের বায়ুনাশে অমৃত। শুধু তাই নয়, পিত্ত ও যকৃতের উপকারী।
আরবিসি/২২ মার্চ/ রোজি