• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

থেমে নেই রাবির চারু শিল্পীরা

Reporter Name / ১৫০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম থেমে থাকলেও, থেমে নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু শিল্পীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে গত ৭ মার্চ থেকে চলছে মেটাল বেইজড নামের একটি ওয়ার্কশপ। চারু শিল্পীদের প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সংস্থা ‘বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট’ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সমন্বয়ে ১৫ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে এই ওয়ার্কশপ চলছে।

ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার, অধ্যাপক ফজলুল করিম, সহযোগী অধ্যাপক নূরুল আমীন, ময়নুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুস ছালাম, কনক কুমার পাঠক, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক শাহরিয়ার হোসেন। এছাড়া চারুকলা অনুষদ থেকে ইতোমধ্যে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়া জাতীয় এবং আন্তজার্তিক পর্যায়ে পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিল্পী শামছুন্নাহার নাসরিন, মো. মনিরুজ্জামান, প্রদীপ সাহা, সঙ্গীতা বিশ্বাস, এমরান হোসেন এবং সামিয়া পারভীন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গনে নিজ নিজ শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। মেটাল বেইজড ওয়ার্কশপ হওয়ায় সকলে বিভিন্ন ধরণের ধাতব যন্ত্রাংশ দ্বারা শিল্পকর্মগুলো তৈরি করছেন। কেউ হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে নিজের মতো করে শিল্পকর্মের আকৃতি দ্বার করাচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে প্রয়োজন মতো মাপের লোহার রড কিংবা টিনের পাত কাটছেন। আবার কেউ মিগ ওয়েল্ডিং কিংবা গ্যাস ওয়েল্ডিং মেশিনের সাহায্যে সেসব ধাতব পাত জোরা লাগাচ্ছেন। অনেকে কালার স্প্রে দিয়ে নিজের শিল্পকর্মের রঙ করছেন, আবার অনেকে পুড়িয়ে শিল্পকর্মের মধ্যে ভিন্ন ধরনের এক আবহ তৈরি করছেন।

নিজের শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পী প্রদিপ সাহা। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, কর্মশালায় তিনি মোট চারটি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন। প্রতিটি শিল্পকর্মে করোনাকালে বাংলাদেশে যে খাদ্য সংকট এবং খাদ্য নিয়ে রাজনীতি হয়েছে সেই প্রেক্ষাপট তুলে আনা হয়েছে। শিল্পী প্রদিপ সাহা তাঁর একটি শিল্পকর্ম দেখালেন, যেখানে টিনের তৈরি বাম হাতে প্রতীকী একটি খাবার ফল মুষ্টিবদ্ধভাবে ধরে রাখা হয়েছে। আরেকটি শিল্পকর্ম দেখালেন যেখানে একটি গোবরেপোকার উপরেও একটি প্রতীকী ফল এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে যা শত চেষ্টাতেও গোবরেপোকার খাওয়া সম্ভব হবে না।

শিল্পকর্ম দুটির বিষয়ে তিনি জানালেন, করোনকালে দেশে অসহায়দের খাদ্য দেয়ার নামে এক শ্রেণির মানুষ নানা ধরণের রাজনীতি চালিয়েছিলেন এই বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতেই সেই হাতটির রঙ কালো করা হয়েছে। এক কথায় খাদ্যের মধ্যে কালো হাত। আবার দ্বিতীয় চিত্রকর্মটির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি চলছে। সমাজের মোড়লরা নিচু শ্রেণির মানুষদের নানা রকমের স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন মুলো ঝুলানোর মতো করে। সেই বিষয়টিই দ্বিতীয় চিত্রকর্মটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশের আরেকটি শিল্পকর্মে দেখা গেলো একটি কড়াইয়ে তিনটি হাত আছে। কিন্তু কড়াইয়ের মাঝখানে ফুটো।

ওয়ার্কশপটির বিষয়ে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে খুবই সীমিত পরিসরে ঘরোয়া পরিবেশে ওয়ার্কশপটি করা হচ্ছে। বিভাগে সেসব প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আছে। সেগুলো দিয়ে যেসকল কাজ করা সম্ভব, শিল্পীরা মূলত সেসকল যন্ত্রাংশ দিয়ে নিজেদের মতো করে চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি ও ওয়ার্কশপ সমন্বয়ক ফজলুল করিম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও পুরো বিশ্বে খাদ্য নিয়ে রাজনীতি চলছে। হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। গরীব শ্রেনিরা এতে খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন পার করছেন। মূলত এই খাদ্য সংকট এবং খাদ্য রাজনীতিকে ফোকাস করে ওয়ার্কশপটি করা হচ্ছে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে শিল্পীরা প্রতিটি শিল্পকর্মে খাদ্য সংকটের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। দেশের আরও বিভিন্ন জায়গায় এই ওয়ার্কশপ চলছে। সকল ওয়ার্কশপের শিল্পকর্মগুলো একত্রিত করে পরবর্তীতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করবে বৃত্ত।

আরবিসি/১৬ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category