তানোর প্রতিনিধি : রাজশাহীর বায়া হতে তানোর-মুন্ডুমালা সড়কে কয়েক যুগ আগের বানানো একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কোনোটি অতিঝুঁকিপূর্ণ সরু কালভার্ট রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সরু কালভার্টগুলো রেখেই আবারও নতুন করে সম্প্রাসারণ করা হচ্ছে রাস্তা। রাস্তা চাওড়া হলেও কালভার্টগুলো সরু থেকে যাওয়ায় যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ এসব সরু কালভার্ট গুলোকে ভেঙ্গে নতুন করে চওড়া রাস্তার মাপে সেতু বানানোর প্রতিশ্রতি দিলেও একযুগের বেশি সময়ও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
মুণ্ডুমালা থেকে তানোর পর্যন্ত ৫টি কালভার্ট এমন সরু যে একটি বাস বা একটি ট্রাক কালভার্টের উপর উঠলে পাশে একটি মানুষ পায়ে হেঁটে যাওয়ার মতো জায়গা থাকে না। অনেক কালভাটের পরিবহনের ধাক্কায় সাইড ওয়াল ভেঙে, রডগুলো দুমড়ে, মুছড়ে আছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এসব সরু কালভার্ট রেখেই নতুন করে রাস্তার সম্প্রাসারণ করাই স্থানীয় জনসাধারণ ও রাস্তা চলাচল কারী যানবহন চালকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য মতে, রাজশাহী বায়া থেকে তানোর উপজেলার বুক চিরে চলে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা পর্যন্ত। তানোরের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কটি নির্মাণের শুরুতে ১০ ফিট প্রসস্ত করা হয়েছিলো। এরপরে আরো কয়েক দফা রাস্তাটি সম্প্রসারণের কাজ করা হয়েছে। শেষে এসে রাস্তাটির প্রসস্ত ঠেকেছে ১৮ ফিটে।
কিন্তু ওই ৪৫ কিলোমিটার রাস্তায় ২০টি মতো ব্রিজ ও কালভার্ট থেকে গেছে ১০ ফিট আকারের। রাস্তা চাওড়া হলেও কালভার্টগুলো সরু থেকে যাওয়ায় ওইসব জায়গায় প্রায় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
এসব কালভার্ট পারাপার হতে গিয়ে মালবাহী ট্রাকসহ ছোট বড় যানবহন প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা পড়ছে। বিশেষ করে রাতে প্রশস্ত রাস্তার মাপে গাড়ি চালাতে গিয়ে সরু কালভার্টে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার ঘটনা বেশি ঘটছে।
তানোর ফায়ার সাভির্সের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ বছরে রাজশাহী-তানোর-আমনুরা রাস্তায় ৩২০টি মত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে প্রাণহানী হয়েছে দেড় ডজনের বেশি ব্যাক্তির। আহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে।
২০১৭ বছর জানুয়ারি মাসেই তানোর-আমনুরা রোডের দেবিপুর মোড় এলাকায় সরু কালভাটের কাছে নির্মানধীন হিমাগারের মালামাল রাখায় চলন্ত ট্রাকের নিচে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে তানোর উপজেলা কর্মরত সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাকসুদা খাতুন মারা যায়।
সবশেষ ২০২০ সালে শুরুতেই যাত্রীবাহি বাস চিনাশো নামক স্থানে নিযন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে দিয়ে দুই জনের প্রাণহানী হয়। এর বাইরে রাতে একাধিক দুর্ঘটনার ঘটলেও এর কোন তথ্যের হিসাব কোন প্রতিষ্ঠনের কাছে নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তানোর অফিসের তথ্য মতে, ১৯৯২ সালে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) আমনুরার ধামধুম থেকে-তানোর হয়ে রাজশাহীর বায়া পর্যন্ত প্রায় ৪৩ কিলোমিটার ১০ ফিট প্রশস্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ করে।
এর পর থেকে বিএমডিএ রাস্তাটির দায়িত্ব পালন করছিল। ২০১২ সালে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ এলজিইডি কাছে ৪৩ কিলোমিটার রাস্তাটি হস্তান্তর করে। সে থেকে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ দায়িত্বপান। এলজিইডি পর্যায়ক্রমে মুন্ডমালা থেকে বাগধানি পর্যন্ত রাস্তাটির সম্প্রাসারণ করে ১৬ফিট। সবশেষ ২০২১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ সরু কালভার্ট রেখেই পূণরাই আবারও রাস্তাটি সম্প্রাসারণ করা হচ্ছে।
রাজশাহী হতে আমনুরা পর্যন্ত চলাচল রত একাধিক যানবহন চালক জানান, পবার দোয়ারী থেকে আমনুরা পর্যন্ত প্রায় ১৫ থেকে ২০টি কালভার্ট-ব্রিজ অতি ঝুঁকিপুর্ণ। রাস্তার প্রশস্ত থেকে কালভার্ট অনেক সরু হওয়াই কালভার্টের উপরে গাড়ি উঠলে আর কোন জায়গা থাকে না। কালভার্টের কাছাকাছি গিয়ে সামনের গাড়ি থাকলে সেখানে কে আগে পার হবে এ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া রাতে এ রাস্তায় গাড়ি চালাতে আরো বেশি সমস্যা হয়।
তারা আরো জানান, কালভার্টগুলো সরু হওয়াই চালকেরা গাড়ি পারাপারের সময় অনেকে ব্যালেন্স হারায় কালভার্টের সাইড ওয়ালে ধাক্কা খায়।
এছাড়াও বাগধানি ও দোয়ারী বিলের উপরে দিয়ে ৬০ ফুটের দুইটি ব্রিজ বহু পুরোনো হওয়ায় ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। তবে গত দশ বছর যাবত কর্তৃপক্ষ এ দুইটি ব্রিজে সর্তকৃত সাইনবোর্ড লাগায় রেখেছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) তানোর উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন কালভার্ট-ব্রিজগুলো অতিঝুঁকিপুণ স্বীকার করে তিনি বলেন, কালভার্টগুলো নতুন করে সম্প্রাসারণ করতে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি) কাছে একাধিক বার প্রস্তবনা পাঠানো হলেও কোন সাড়া মিলছেনা। তাই ঝুঁকিপূণ কালভাট রেখেই রাস্তার সম্প্রাসারণ কাজ করা হচ্চে।
আরবিসি/১৬ মার্চ/ রোজি