স্টাফ রিপোর্টার : সিসি ক্যামেরার দৃষ্টিসীমা অবলোকনের সমস্যা এবং পরিবেশ দূষণের অজুহাতে রাজশাহীর বাগমারার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ১৫টি গাছ বিক্রি করে দিলেন উপজেলা স্বাসস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। গাছগুলো বিক্রি করে দেওয়াতে স্থানীয় লোকজন ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত বছর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) হিসাবে গোলাম রাব্বানী যোগদান করেন। তাঁর আগের কোনো কর্মকর্তা এই ধরণের উদ্যোগ নেননি। তবে তিনি গত জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ১৫টি গাছ বিক্রির উদ্যোগ নেন। এজন্য স্থানীয় একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ্যে নিলাম ডাকের মাধ্যমে ৯৭ হাজার টাকায় গাছগুলো সুমন নামের একজন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়।
ছুটির দিন গত শুক্রবার (১২ মার্চ) থেকে গাছকাটা শুরু হলে বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের নজরে আসে। এসময় কয়েকজন প্রতিবাদ জানাতে আসলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে না পাওয়ার কারণে তা পারেননি বলে জানিয়েছেন। তাঁরা এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানাবেন এবং প্রয়োজনে কর্মসূচি দিবেন বলে জানান।
শনিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে থাকা ইউক্যালিপ্টাস, মেহগনি, শিশুসহ বিভিন্ন জাতের গাছগুলোর গোড়ার দিকে সাদা ও লাল রং দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। এর মধ্যে গাছ কাটার দৃশ্য দেখা যায়। শ্রমিকেরা করাত দিয়ে গাছ কেটে ডাল-পালা আলাদা করে রাখছেন। কয়েকটি গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। কাটা গাছের কাঠগুলো অটোভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কমপ্লেক্স থেকে। গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা বলেন, তাজা গাছগুলোই কাটছেন। কোনো মরা গাছ কাটা হয়নি। এসব গাছ কেনা হয়েছে বলে জানান। তাঁদের ভাষ্য দুইদিন আগ থেকে তাঁরা গাছ কাটা শুরু করেছেন।
স্থানীয় অর্ধশত বাসিন্দা বলেন, কেটে ফেলা গাছগুলো সৌন্দর্য বর্ধনসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছিল। ছায়া হয়েও থাকতো গাছগুলো। বেশ কয়েক বছর আগে পরিকল্পনা করেই গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। গাছগুলো হুমকি বা ক্ষতির কোনো কিছু তাঁরা দেখছেন না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যে যুক্তি দেখিয়ে তাজা গাছগুলো বিক্রি করে দিলেন তা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকসহ ছয়-সাতজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগের কর্মকর্তারা প্রতিবছর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন করে গাছ লাগিয়েছেন। আর তিনি গাছ লাগানোর উদ্যোগ না নিয়ে কেটে ফেললেন তা দুঃখজনক। গাছগুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঐতিহ্য। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজের খেয়াল খুশি মতো গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী ১৫টি গাছ বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, গাছগুলো থাকায় সিসি ক্যামেরায় হাসপাতালের চিত্র দেখতে সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি ভবনের ছাদের ক্ষতি হচ্ছিল। এই কারণে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, গাছগুলো বিক্রির আয়োজন করতে যে খরচ হয়েছে তা তিনি নিজ পকেট থেকে শোধ করেছেন এবং গাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গাছ বিক্রির কারণ হিসাবে তিনি ইউক্যালিপ্টাস গাছকে পরিবেশের জন্য হুমকী বলে মন্তব্য করেছেন। তবে গাছগুলো থাকায় সিসি ক্যামেরার সমস্যা ও ছাদের ক্ষতি হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানালে তিনি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
আরবিসি/১৫ মার্চ/ রোজি