• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

বালুর ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র

Reporter Name / ১৪৬ Time View
Update : সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। সাগরতটে স্থাপন করা হচ্ছে বালুর ভাস্কর্য। বিশাল এলাকা নিয়ে এ ভাস্কর্যে ফুটে উঠছে মহান ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার নানা চিত্র। সৈকতে ব্যতিক্রমধর্মী এই বালুর ভাস্কর্যের আয়োজন করে জেলা পুলিশ প্রশাসন।

মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৭ মার্চ সমুদ্রসৈকতে নির্মিত এই ভাস্কর্য উদ্বোধনের মাধ্যমে পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। প্রদর্শনী চলবে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। ভাস্কর্যটি নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে দেবে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ সৈকতও রূপ বদলায়। শীতের কুয়াকাটা শান্ত, বর্ষায় তা উত্তাল। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটার আলাদা আবেদন রয়েছে। কারণ, এ সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। তাই কুয়াকাটা সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণে মুখর থাকে। সেই কুয়াকাটা সৈকতে বালুর ভাস্কর্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ তুলে আনা হচ্ছে।

কুয়াকাটা সৈকতে প্রথমবারের মতো অতুলনীয় এ শিল্পকর্ম তৈরির কাজ করছেন রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অনুপম ধর ছিলেন শিল্পকর্ম তৈরির কাজের দলনেতা। অন্য সদস্যরা হলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানি কুমার দাস, শাশ্বত রায়, আবদুর রহমান বিজয় এবং অনার্সের শিক্ষার্থী প্রীতম রায় ও মারিয়া আক্তার।

গত শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত সৈকতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বালুর ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যস্ত। বাংলাদেশের মানচিত্রের ঠিক মাঝখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। কেউ আবার ভাষা আন্দোলনের নানা চিত্র ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তুলছেন। এ ছাড়া এ ভাস্কর্যে মহান ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উল্লাসের চিত্র ফুটে উঠেছে। ভাস্কর্যের গায়ে লেখা, ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই’ নানা স্লোগান। সৈকতে আসা পর্যটকেরা ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুসহ বাঙালি জাতির আন্দোলনের নানা ভাস্কর্যের প্রতি জানাচ্ছেন বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

সমুদ্রসৈকতে ভাস্কর্য নির্মাণে আসা অনুপম ধর বলেন, তিনিসহ চারুকলার ছয় শিক্ষার্থী ১০ মার্চ থেকে সৈকতে বালুচরে ভাস্কর্য নির্মাণ করছেন। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থের এ ভাস্কর্য নির্মাণ উপভোগ করতে আসেন প্রতিদিনই পর্যটকেরা। তাঁরা এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকছেন। সবার নজর সাগরতটে বালুর ভাস্কর্যের ওপর। ইতিমধ্যে ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

শিক্ষার্থী মারিয়া বলেন, ‘আসলে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন স্মরণে আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উল্লাস—সবই ফুটে উঠেছে এ ভাস্কর্যে। এককথায় আমাদের ইতিহাস যেন সকলের চোখে পড়ে।’

এদিকে সাগরসৈকতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার বিভিন্ন ছবি তুলে ধরায় জেলা পুলিশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা।

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ (পিপিএম) বলেন, সৈকতে ভাস্কর্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুজিব জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বাংলাদেশ স্বল্প উন্নয়ন দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে রূপান্তরের চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তি ও স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৭ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে এই ভাস্কর্যের। ভাস্কর্যের এই প্রদর্শনী ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে।

আরবিসি/১৫ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category