সাপাহার প্রতিনিধি: বহুকাল ধরে পুনঃখনন না হওয়ায় পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে শুধু নিজের স্মৃতি বহন করে চলেছে নওগাঁর সীমান্ত ঘেঁষা সাপাহার ও পোরশা উপজেলার একমাত্র পুণর্ভবা নদী।
এক সময়ের উত্তাল এ নদীটি এখন নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে খরায় এর তলদেশ খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নদীটিতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করতো অসংখ্য পালতোলা নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার। মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, রহনপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে। সে সময়ে বিভিন্ন স্থানের বড় বড় হাট বাজারে ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, ডাল ও গমসহ বিভিন্ন পন্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ছোট বড় নৌকায় পাল তুলে ছুটে চলতেন। শুধু পণ্যই নয়; হাট বাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশুও। ওই সময়ে পূর্ণভবা ছিল পূর্ণযৌবনা।
জানা গেছে, নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বামনগোলা ও তপন থানার করিদহ, বটতলী এবং লক্ষ্মীনারায়ণ গ্রামের কোলঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল উপজেলা সদরের নিতপুরের কোলঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে।
এ দুই উপজেলার একমাত্র নদীপথ হিসাবে ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার শক্ত ভীত গড়ে তুলেছিলেন। শুধু হাট বাজারই নয়, নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ।
এ নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবুজ ফসল ফলাতো। এর পানি দিয়ে নানা ফসলে ভরে উঠত ফসলের ক্ষেত। আবার ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই পূণর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারাবছর ধরে। ফলে জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও পাশের গ্রামগুলোতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল।
জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাত দিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য। মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলতো। সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা পূর্ণভবা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। পাড়গুলো হয়েছে কৃষিজমি। নদীগর্ভে জেগে উঠা চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলা। এক সময়ের ব্যবসা বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদী, নিভে গেছে বিপুল সম্ভবনা।
নদীকেন্দ্রিক সম্ভবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনও এসব নিয়ে ভাবেনি। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না এটি একটি প্রবাহমান নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুণর্ভবা এ নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। সেই সঙ্গে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, বর্তমান সরকার নদীবান্ধব সরকার। নদী রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী সবসময় কাজ করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁর জেলা প্রশাসকও কাজ করছেন। দ্রুত নদীটির পূনঃখনন কাজ করে তার যৌবন ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
আরবিসি/১৩ মার্চ/ রোজি