রাণীনগর প্রতিনিধি: নওগাঁর রানীনগরে বীজবিহীন চায়না-৩ জাতের লেবু চাষে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে চাষীরা। উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন গ্রামে সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্টের ১৫ জন তরুণের উদ্যেগে গড়ে তোলা হয়েছে এ বাগান। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অন্য চাষীরা উদ্বৃদ্ধ হয়েছেন। ধীরে ধীরে কাশিমপুর ইউনিয়ন লেবু অঞ্চল হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত পাবে বলে সুফলা নওগাঁর প্রত্যাশা।
জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন গ্রামে ২০১৯ সালের শুরুতে ২ একর পতিত জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা নেয় তরুণরা। সেসময় নাটোরের ভাতুরিয়া হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে ৫শ পিস চায়না-৩ লেবুর চারা সংগ্রহ করেন তারা। যেখানে সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্টের মাধ্যমে অর্থ সম্পাদক মোকাদ্দেস সরকারের আগ্রহ উদ্দীপনায় ১৫ তরুণ নিয়ে সম্মিলিত এ কৃষি উদ্যোগের সৃষ্টি করা হয়েছে।
বাগানে রয়েছে ৭শ পিস চায়না-৩ লেবু, ২শ পিস পেয়ারা, ৬শ পিস ড্রাগন ও ২শ পিস মাল্টার গাছ। তবে বাগানে সম্ভবনাময় হয়ে উঠেছে চায়না-৩ লেবু। এ বাগান থেকে লেবুর চারা সংগ্রহ করে কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ১০ কাঠা, কাশিমপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা এক বিঘা, চককুতুব গ্রামের মিন্টু এক বিঘা, কুজাইল গ্রামের রাকিব ১০ কাঠা এবং আব্দুর রাজ্জাক ও মোখলেছুর রহমান চার বিঘা জমিতে চায়না-৩ জাতের লেবুর বাগান করেছেন।
চাষিরা জানিয়েছেন, পতিত জমিতে প্রথমে বিঘা প্রতি ৫০ কেজি হারে ডলোচুন দিয়ে ১৫ দিন ফেলে রাখা হয়। এরপর সরভূজ পদ্ধতিতে ৬ফুট দুরুত্বে বেড তৈরী করা হয়। গর্তের মাটির সঙ্গে ১০ কেজি গোবর সার, ২শ গ্রাম ডিএপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ৫০ গ্রাম দস্তা, ২৫ গ্রাম বোরন মিশিয়ে ১৫ দিন আবারও ফেলে রাখা হয়। এরপর ১২ ফুট দুরুত্বে লেবুর চারা রোপন করা হয়। দেশে যত জাতের লেবু আছে তার মধ্যে এ জাতের লেবুর ধারন ক্ষমতা বেশি এবং সারা বছর পাওয়া যায়।
কাশিমপুর গ্রামের আব্দুল মমিন বলেন, সুফলা নওগাঁর কথা শুনে তিনি বাগান দেখতে যান। এ জাতের লেবু থেকে সারা বছর লেবু পাওয়া যায়। গুনগত মান ভাল এবং লাভজনক হওয়ায় তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক বছর আগে ওই বাগান থেকে ৩০০ পিস চারা সংগ্রহ করে ২ বিঘা জমিতে বাগান করেছেন। বাগানে ফল আসা শুরু হয়েছে।
সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্টের সভাপতি হাবিব রতন বলেন, চারা লাগানোর তিন মাস পর ফুল এবং ছয় মাস বয়স থেকে ফল আসা শুরু হয়। এ লেবু বীজ বিহীন, রস বেশি, গাছে ফলের পরিমাণ বেশি, আলাদা ফ্লেভার এবং টকের পরিমাণ অনেকটা কম। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি লেবু চাষে উপযোগী। পোকামাকড়ের উপদ্রবও কম। অল্প সময়ে ও অল্প খরচে লেবু চাষ করা সম্ভব। গাছ যত বড় হবে লেবু তত বেশি হবে।
কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজমা সুলতানা সাথী বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে এবং কৃষকদের উদ্যোগে একটি মিশ্র ফল বাগান সৃজন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগীতাসহ দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। বাগানে চায়না-৩ জাতের লেবুতে চাষীরা সফলতা পেয়েছেন।
আরবিসি/১৩ মার্চ/ রোজি