চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাতে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হলেও দিনের বেলার শীত বিদায় নিয়েছে কিছুদিন আগেই। প্রকৃতিতে এখন ভরা বসন্ত। ঘন কুয়াশা পড়েনি প্রায় মাসখানেক। কিন্তু হঠাৎ গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পাড়ে প্রকৃতি।
বুধবার আগের রাতের মতো কুয়াশা না থাকলেও বৃহস্পতিবার ভোরে আবারো কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন ছিলো পরিবেশ।
কয়েকদিন থেকে অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বাড়ার পর হঠাৎ প্রকৃতির এমন আকস্মিক পরিবর্তন দেখে সবাই হচকচিত। এতে আমের রাজধানী খ্যাত উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মুকুলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
তাদের কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ। কৃষিবিদরা তাদের অভয় দিয়ে বলেছেন, দু’একদিন এমন হলে ক্ষতি তেমন হবে না। তবে টানা কয়েক দিন কুয়াশা পড়তে থাকলেই বিপদ।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার ফাল্গুনের আগেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির ওপরে উঠে গেছে। বর্তমানে এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এছাড়া দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গিয়ে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়েছি। অর্থাৎ এবার সময়ের আগেই গরম পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। যা আমের ফলনের জন্য উপকারী।
তবে হঠাৎ কুয়াশার জন্য চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে স্থানীয় আমচাষিদের কপালে। এমনভাবে কুয়াশা পড়েলে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
শিবগঞ্জের আমচাষি শহিদুল হক হায়দারি জানান, ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমের মুকুলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। এতে আমের মুকুল ঝরে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে আমের ফলনেও।
সদরের নয়াগোলা এলাকার আমচাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, এমন কুয়াশা হঠাৎই পড়েছে গত দু’রাত থেকে। এটি অব্যাহত থাকলে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে। মুকুল থেকে এখনই গুটিতে রূপান্তর হওয়ার সমম চলে এসেছে। এ সময়ে ঘন কুয়াশা আমের মুকুলের জন্য হন্তারক। যদিও এরই মধ্যে মুকুলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছেন বলে জানান এ চাষি।
সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের আমচাষি সেজান মিয়াঁ বলেন, গত বছর মহামারি করোনার কারণে আমে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পাঠাতে না পেরে বাগানেই নষ্ট হয় বিপুল পরিমাণ আম। এমনকি সার, কীটনাশক প্রয়োগ করার খরচ পর্যন্ত ওঠেনি গত বছর। আর এবার হঠাৎ কুয়াশা আবারো ক্ষতির শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে তিনি আরও বলেন, হঠাৎ এমন ঘন কুয়াশা ছাড়া এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। নিয়মিত চলছে বাগান পরিচর্যার কাজ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এসময় প্রায় ৯৯ শতাংশ গাছেই আমের মুকুল চলে এসেছে। কিছুকিছু গাছে আমের গুটিও আসতে শুরু করেছে। যেসব গাছে গুটি এসেছে সেগুলোতে তেমন ক্ষতি না হলেও কুয়াশায় মুকুলের ক্ষতির সম্ভবনা বেশী।
উল্লেখ্য, জেলায় এবার ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
আরবিসি/১১ মার্চ/ রোজি