• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

স্বামী নেই, গর্ভবতিও নন, তবুও মাতৃত্বকালীন ভাতা!

Reporter Name / ১১২ Time View
Update : সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : বিয়ে হয়েছিল ১০ বছর আগে, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ছয়-সাত বছর ধরে রাজশাহীর বাগমারার দ্বীপপুপর ইউনিয়নের নানসর গ্রামে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন সুমি আকতার (১৫)। আর বিয়ে হয়নি। অথচ ‘দরিদ্র মার জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতায়’ এই নারীর নাম হয়েছে তালিকায়। ব্যাংক হিসাবেও টাকা জমা হয়েছে। সরকারি নিয়মানুসারে গর্ভবতী মাতারা এই ভাতার আওতায় আসবেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অনিয়ম করে ওই নারীর নাম তালিকাভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) স্থানীয় একজন নারী এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান অনিয়মের বিষয় স্বীকার করে বলেছেন, এটা ভুল হয়েছে। তিনি যাতে ভাতা না পান সে ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য হাছিনা বানুর লিখিত অভিযোগ ও নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা যায়, দরিদ্র মার জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সন্তান সম্ভাব্য গর্ভবতি মাতাদের এই সুবিধার আওতায় আনার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়। প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ ইউনিয়ন কমিটি এই তালিকা প্রস্তত করে তা উপজেলা কমিটির কাঠে পাঠানোর পর চুড়ান্ত করা হয়। সে মোতাবেক দ্বীপপুর ইউনিয়ন থেকে ১৪ জনের নাম অনুমোদন দিয়ে উপজেলায় পাঠানো হয়। গত ৩০ জানুয়ারি উপজেলা কমিটি তালিকাটি অনুমোদন দেয়। সেখানে নানসর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা সুমি আকতারের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর বাবার নাম এছের আলী দেওয়া হলেও স্বামীর নাম দেওয়া হয়নি।

রোববার সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুমি আকতারের সাত বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। সে থেকে তিনি পিতার বাড়িতেই অবস্থান করছেন। আর বিয়েও করেননি তিনি। তবে চলতি বছরের মাতৃত্বকালীন ভাতায় তাঁকে সন্তান গর্ভবতি দেখিয়ে ভাতার তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। তাঁর ভাতার অর্থও নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে। এখন ভাতা উত্তোলনের প্রস্তুতি চলছে। তিনি জাল গর্ভবতির প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন বলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়।

সুমি আকতারের আত্নীয়-স্বজনসহ অর্ধশত গ্রামবাসীরা বলেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি আর বিয়ে করেননি। তাঁর সন্তান সম্ভাব্য হওয়ার বিষয়ে তাঁরা এটাকে আশ্চর্যজনক বলে মন্তব্য করে বলেন, স্বামী নেই বিয়েও হয়নি, তাঁর গর্ভবতি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

সুমি আকতারও এই প্রতিবেদকের কাছে বিয়ে না হওয়া এবং সন্তান গর্ভবতি হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন। তবে তিনি কীভাবে তালিকাভ’ক্ত হলেন সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এজন্য (তালিকাভুক্ত হতে) যা কিছু করার তা চেয়ারম্যান করেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য হাছিনা বানু বলেন, সুমি আকতারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান এই অনিয়ম করেছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, যে নারীর স্বামী নেই এবং ছয়-সাত বছর ধরে স্বামী পরিত্যাক্তা হিসাবে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি ভাতার তালিকাভুক্ত হলেন কীভাবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকায় আরও কয়েকজন গর্ভবতি নারী রয়েছে যাঁদের নাম তালিকাভূক্ত হয়নি। বিষয়টি তাঁর নজরে আসার পর উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। নিরুপায়ে বিবেকের তাড়নায় নিজেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

দ্বীপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সুমি যাতে ভাতা না পান সেজন্য কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি জেনে-বুঝে কেন এই অনিয়ম করলেন এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলেন পরে কথা হবে।

ভাতা অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার মাক্বামাম মাহমুদা বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এটা হওয়ার কথা নয়। তাঁর যোগদানের আগেই এই অনিয়ম হয়েছে। তিনি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

আরবিসি/০৮ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category