আরবিসি ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা ৬৬ দিন বন্ধ ছিল দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্রোকারেজ হাউজসহ বিনিয়োগকারীরা। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেশকিছু উদ্যোগ করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয় পুঁজিবাজার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের জানুয়ারি থেকেই পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। এ কারণে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন অর্ধেকে নেমে আসে। এই অবস্থা চলে গত বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
টানা ৬৬ দিন বন্ধের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন কমে ১৯ হাজার কোটি টাকা। ডিএসই’র ক্ষতি হয় ৬২ কোটি টাকার বেশি। সিএসই’র ক্ষতি হয় ১০ কোটি টাকা। লোকসান ও ব্যয় কমাতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো জনবল কমাতে শুরু করে। হাজারও কর্মী চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন
করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন করোনা কিংবা করোনার চেয়ে বড় মহামারি এবং যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও যাতে লেনদেন বন্ধ না হয় সে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে ডিএসই’র আইটি খাতের সংস্কার, নতুন কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন ও লেনদেন বাড়াতে নতুন ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সাধারণ ছুটিতে ডিএসই’র ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএসই’র লেনদেনের চার্জ ৫ দশমিক ৮ কোটি টাকা, অগ্রিম আয়কর ১১ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং স্টেকহোল্ডারদের কমিশন ৪৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। একই দৃশ্য ছিল দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেরও (সিএসই)।
ডিএসইতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। সিএসইতে ১০-১২ জন। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ২০০-২৫০ জন। ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০০-৭০০ জন। করোনাকালে আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয়বাবদ ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্র্যাক ইপিএলের মাসে ৭০ লাখ টাকা করে লোকসান হয়েছে। তিন মাসে দুই কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বিএমবিএ’র সদস্য সংখ্যা ৬৩। মাসে প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়ে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতি হয়েছে। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকা”
ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে ডিএসই’র আয় কমেছে অর্ধেক। এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি হয়নি বরং কাটছাঁট হয়েছে। শুধু তাই নয়, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ভালো লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
করোনার শুরুতে ডিএসই’র দৈনিক লেনদেন ২০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর লেনদেন শুরু হলেও গতি ফেরেনি। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন উদ্যোক্তা-পরিচালক ন্যূনতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করে। কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করে। একইসঙ্গে ওয়ালটন ও রবি আজিয়াটা কোম্পানির মতো বেশকিছু বড় কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে। এসব উদ্যোগের কারণে পুঁজিবাজারের লেনদেনেও গতি আসে। বর্তমানে বাজারে দৈনিক ৯০০ কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হচ্ছে। তাতে গত তিন মাসে ডিএসই’র প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় দুই হাজার পয়েন্ট। বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধনও।
আরবিসি/০৮ মার্চ/ রোজি