বিশেষ প্রতিবেদক : কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীত পেরিয়ে চলছে এখন বসন্তকাল। প্রকৃতির দরজায় কড়া নাড়ছে গ্রীষ্ম। এই তিন ঋতুর পরিক্রমায় প্রকৃতিও যেন তার আপন রং বদলায়। গাছের পাতাগুলো রং পাল্টাতে শুরু করে। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ; সবশেষে লালচে বর্ণের। বিবর্ণ পাতাগুলো আস্তে আস্তে ঝরতে শুরু করে। একটা সময় সব পাতা ঝরে পড়ে। দেখলে মনে হয়ে মৃতগাছ। আর শূন্য ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু গাছের গুঁড়িটি। কারণ এ সময়ে একটু বাতাস পেলেই গাছের এই মুচমুচে শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ে।
ঠিক তেমনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চলাচলের রাস্তা যেন ঝরা লালছে পাতার বাহারি লালগালিচা হয়ে আছে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে হাঁটার সময় পায়ের নিচে পড়ে থাকা শুকনো দেবদারুর পাতাগুলোর মড়মড় শব্দ যেন অন্যরকম এক অনুভূতি জোগায়। প্রাণ খুলে গাইতে ইচ্ছে করে ঝরা পাতার গান…
‘ও ঝরা পাতা, ও ঝরা পাতাগো
তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথাগো,
তোমার সাথে আমার দিন কাটানো কথা।’
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ছাড়াও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন রাস্তায় ঝরা পাতা পরে রাস্তার দু-ধারে জমা হয়ে আছে। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ পাশের মেহগনি বাগানেও পরে আছে অনেক ঝরা পাতা। এছাড়া ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টার সংলগ্ন রাস্তার ধারে, মতিহারে হলের সামনের মেহগনি বাগানে, রাকসু ভবনের সামনে যেন ঝরা পাতার লালগালিচা তৈরি হয়েছে।
প্রতিদিনই রাস্তায় পড়ে থাকা পাতাগুলো পরিস্কার করতে করতে ফের জায়গাগুলো ভরে যায় পাতায়-পাতায়। সেই শুকনো পাতার আস্তরণে চাপা পড়ে যায় পিচ ঢালা রাস্তা। এই প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে ক্যামরায় বন্দি করার জন্য ক্যাম্পাসে অনেকেই ঘুরতে বের হয় বিকেল বেলা।
ক্যাম্পাসে বিকেলে ভীড় জমায় রাজশাহীতে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সামাউন পাটোয়ারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বসন্তের বিকেলের সূর্যের আলো, ঝড়া পাতায় মোড়ানো রাস্তা, সত্যিই অপরুপ স্নিগ্ধতায় ভরা। প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি, পিচঢালা রাস্তায় পাতাগুলো গালিচার মতো বিছানো মনে হয়। মড়মড় শব্দ করে পাতা মাড়িয়ে হেঁটে চলা সত্যিই অসাধারণ এক অনুভূতি। একটু এগিয়ে যখন লাইব্রেরি যাবার রাস্তা ধরা হয়, তখন হঠাৎ হালকা বইতে থাকা বাতাসে গাছের পাতাগুলো ঝড়তে থাকে, মনে হয় কেউ যেন ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছে।
পিচঢালা রাস্তায় এমন ঝরা পাতা দেখে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মুগ্ধ দর্শনার্থীরাও। নাটোর থেকে ঘুরতে আসা নুসরাত সাদিয়া নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ঝড়া পাতা, আমের মুকুল, নতুন সুশোভিত ফুল সব মিলিয়ে রাবি ক্যাম্পাস যেনো সেজেছে বিমোহিত সাজে। ক্যাম্পাসের দেবদারুসহ অন্যান্য গাছগুলোর পাশ দিয়ে হাঁটলে অসাধারণ এক অনুভূতি কাজ করছে। দেখে যেনো মনে হচ্ছে শুকনো পাতার বিছানা। পড়ন্ত বিকেলে সাবাশ বাংলাদেশের মাঠে বিছানার মতো ঝড়া পাতায় বসে সাবাশ বাংলাদেশ ভাস্কর্যকে দেখতেও অপরূপ লাগছে।
আসলে কেন এসময়ে গাছের পাতা শুকিয়ে যায় কখনো কি একবার ভেবেছি। কেনই বা গাছ পাতাহীন হয়ে পরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম কবীর বলেন, বৃক্ষ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলো হলো পত্র ঝরা বৃক্ষ এবং চিরহরিৎ বৃক্ষ। বর্তমান সময়ে যেসকল বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ছে এগুলো পত্র ঝরা বৃক্ষ। শুষ্ক মৌসুমে এসকল বৃক্ষের পাতাগুলো ঝরে পরে। এসময় পানি স্বল্পতার কারণে মূল দিয়ে বৃক্ষগুলো তেমন পানি শোষণ করতে পারে না। ফলে বৃক্ষগুলো ক্লোরোফিলের সাহায্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যপ্রস্তুত করতে পারে না।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যপ্রস্তুত করতে না পারায় পাতার গোড়ার কোষগুলো অকেজো হয়ে পরে। ফলে এসময় পত্র ঝরা বৃক্ষগুলোর পাতা ঝরে পরে। পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত হওয়া শুরু হলে আবার নতুন পতা গজায়।
আরবিসি/০৭ মার্চ/রোজি