স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের একক আলোচনা সভা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে, ৩৮ বছর রাজনীতি পথে প্রান্তরে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর সিএ্যান্ডবি মোড়ের মনিবাজারস্থ শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেন্টার ফর পিপল্স এ্যান্ড পলিসি’র আয়োজনে আলোচনা সভায় রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের হাজারো নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভায় আসাদ বলেন, দলের পদ পদবী তো বিভিন্ন মানুষই পায়। পদ পাওয়া মানুষেরা আমাদের সাথে হাঁটুক, আমরা পদবিহীন মানুষেরা হাঁটবো। একবার দেখতে চাই, তাদের কাতারে লোক বেশি হয়, নাকি আমাদের কাতারে। অনেক নেতার তো বড় বড় সম্মেলনে তিন’শ লোকও জোটে না। অথচ আজকে অন্য ইতিহাস রচনা হলো, পদবিহীন আসাদের একক আলোচনা অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করে হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, আমাকে আওয়ামী লীগের পদ থেকে বাদ দিতে পারেন। আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে বাদ দিতে পারবেন না। আমাকে শেখ হাসিনার মিটিংয়ে ওঠা থেকে বঞ্চিত করতে পারেন। কিন্তু মাদ্রসা মাঠে শেখ হাসিনার উচ্চারণ- “আসাদ কোথায়?” এ ডাক থেকে আপনারা আমাকে বঞ্চিত করতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাদ্রাসা মাঠের সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমি সৌভাগ্যবান মানুষ, আমার কথা বলার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কণ্যা শেখ হাসিনা আপা দুই মিনিট মঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই অর্জন, ভালোবাসা থেকে তো আমাকে বঞ্চিত করতে পাবরেন না।
তিনি বলেন, আমাকে মনোনয়ন না দেয়ায় শেখ হাসিনা আপাকে আমি বলেছিলাম, আপা আমি আর কাজ করতে পারব না। আপা আমাকে বলেছিলেন, “জবাই কাকে করা হয়? কাছের মানুষকেই। আমি তোকে জবাই করেছি, তোকেই কাজ করতে হবে।” এই অধিকার নিয়ে কে কথা বলতে পারে? এটি তো আপনারা বন্ধ করতে পারবেন না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বলছি সাবধান! ভালোভাবে চলেন, ভালো পথে হাটেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণদেরকে সম্মান করেন।
আসাদ বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ যাদের ছাড়া আমাদের মিটিং মিছিল হয় না, যারা আমাদেরকে নেতা তৈরি করে, যারা আমাদেরকে সম্মান দেয়, তাদের সম্মান দিয়ে স্কুল কলেজে চাকুরি দেয় নাই, টাকা নিয়ে জামায়াত বিএনপির কর্মীদের দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্যে করেন আসাদ বলেন, মাননীয় নেত্রী, আজকের এই আলোচনা থেকে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এই ১২/১৩ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আপনি নিরলস পরিশ্রম করছেন। রাজশাহী জেলায় বিভিন্ন বেসরকারি কলেজে যত চাকুরি হয়েছে, এমপি সাহেবেরা টাকা নিয়ে ৭০ শতাংশ জামায়াত-বিএনপিকে চাকুরি দিয়েছেন। এটি যদি কেউ চ্যালেঞ্জ করেন, আমি প্রমাণ করে দিব। আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ৩০ শতাংশ, বলতে গেলে দুই-একটি বাদে কোনটি টাকা ছাড়া চাকুরি হয়নি।
জিয়াউর রহমানের কর্মকান্ড সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানের ভোটকাটার ইতিহাস জানেন? সামরিক উর্দি পরে নিজেই নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা দিয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা হয়েছেন। চাকুরি ছাড়েননি। হ্যাঁ-না ভোট করেছে। সেই হ্যাঁ-না ভোট জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থেকে দিয়েছেন। আমরাতো কোন সরকারি কর্মকর্তাকে মনোনায়ন দেইনি। আপনারা খেলতে আসেন না। মাঠে আসুন, খেলুন। সাহসিকতা দেখান।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে আসাদ বলেন, ৭৫ এর পর সব হারিয়ে আমরা যখন মাথা তুলতে চেয়েছি, আপনারা তো দাঁড়াতে দেননি। আমরা বলেছি, আমরা দাঁড়াবোই। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর লাশ মাড়িয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশ বাস্তবয়ন করেছি। জিয়ার যদি এতই সাহসী সৈনিক হন আপনারা, রাস্তায় আসেন না? আমরা তো বুটেল-বোমার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেই জায়গাতে আপনারা আসুন। এখনি ক্লান্ত হয়ে গেলেন? ২১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে ছিলাম আমরা। ৭৫ এ কোন কর্মসুচি করতে গিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছি তো সেই খিচুড়ি ঐ জামায়াত-বিএনপির লোকেরা কেড়ে নিয়ে গিয়ে কুকুরকে খাইয়েছে।
নিজের সততার দাবি করে আসাদ বলেন, আমি শপথ করে বলতে পারি, আমি অর্থ কামানোর জন্য আওয়ামী লীগ করিনি। দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আমি দুদককে বলতে চাই, আপনাদের কাছে অনুরোধ করে গেলাম, আমার অর্থ সম্পদের হিসেব দিয়েই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খাতা খুলুন। আমি সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় রাজশাহীতে অনেক সরকারি প্লট দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নিয়েছেন। নাম না বলি, আমাকেও ডেকেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ৫ কাঠার প্লট! আমি বলেছি শুধু আসাদুজ্জামান হলে নিব, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিব না। আমি নেইনি। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমপিতে মনোনয়ন না দিয়ে, জেলা পরিষদের চ্যেয়ারম্যান করার প্রস্তাব দেন, আমি আপার কাছে অনুরোধ করেছি, আমি যাব না। বরেন্দ্র ও আরডিএ’র চেয়ারম্যানের প্রস্তাব দেন, আমি নেই নি।
দলীয় বিরোধিতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমার নাম গেলেই কিছু মানুষ বিরোধীতা করে। আমিতো করতেই চাই না, আমি ঐসব জায়গায় যাব না। আমি আওয়ামী লীগের পথেই থাকব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথেই পথ চলবো। আর আমার জীবনের শেষ লক্ষ্য তো আছেই, আমার মৃত্যুর পর অনেক নেতার চেয়ে আমার জানাযা যাতে বড় হয়, এই লক্ষ্যেই আমার পথ চলা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনাকেই বলতে শুনেছি, আমি দলের ত্যাগি নেতাদের মূল্যায়ন করতে চাই। আপনি যে কর্র্মীকে যেখানেই পান, তার খোঁজ নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। সাথে সাথে বলে উঠেন, কি খেয়েছো? কোথায় উঠেছে? কি করো? আপনি এত বড় রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের পরও এই কাজটি করেন। কিন্তু আপনার পাশের নেতারা কী সেই কাজটি করেন? আওয়ামী লীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের এখন স্যার বলতে হয়। এখনও জাতির পিতা শেখ মুজিব মুরব্বিদের কাছে মুজিব ভাই অথবা শেখ সাহেব। এখনও শেখ হাসিনা আমাদের কাছে আপা। কিন্তু কিছু কিছু নেতা আছেন, যাদেরকে স্যার না বললেই নয়। মাননীয় নেত্রী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যারা আওয়ামী লীগে এসেছেন সেই সমস্ত বেয়াদবদের স্যার বলতে প্রবীণ নেতারা কষ্ট পায়। আওয়ামী লীগে আমরা কাউকে স্যার বলতে আসিনি। আওয়ামী লীগ গণ মানুষের দল। আমি এইসব দেখে বারবার বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী আপার কথা মনে পড়ে। আমার মনে হয় আপনারাও আমাদের মতই চিন্তা করেন, বিশ^াস করেন।
আসাদ বলেন, আমরা যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাজনীতি করি। তারা কোন কাজে গ্রামে গেলে, সেখানে যদি কোন গরীব আওয়ামী লীগের কর্মী থাকে, সে পাগল হয়ে যায়। তার বাড়িতে যদি খাবার না থাকে, সে পাশের বাড়ি থেকে চাল-ডিম নিয়ে এসে ঐ নেতাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এটি আমরা খুব উপভোগ করি। এই কথাটি আপনাদের মনে রাখতে হবে, ঐ কর্মি যখন কোন আপদে-বিপদে রাজশাহী শহরে আসেন, তাকে এককাপ চা দেওয়া তো দুরের কথা, তার সাথে দূর্ব্যবহার করি আমরা।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আসাদ বলেন, মাননীয় নেত্রী, এই করে আপনার ১৮ ঘন্টা শ্রমে কী আওয়ামী লীগ দাঁড়াবে?
এমপিদের দুর্নীতির বিষয়ে আসাদ বলেন, আমি বিশ^াস করি না। নামের আগে এমপি লিখবে। ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি করবে। এটি বলা যাবে না। এই আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আমি কাজ করবো না। আমি চাই আওয়ামী লীগের কোন নেতা স্যার হবে না ভবিষ্যতে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বন্ধু হবে।
শেখ হাসিনার প্রশংসা করে আসাদ বলেন, শেখ হাসিনা লড়াই সংগ্রাম করে এই দেশের দুঃখী মানুষের জন্য, বিধবা মায়ের জন্য, স্বামীহারা মায়েদের জন্য। শেখ হাসিনা করো কাছে মাথা নিচু করে না। শেখ হাসিনাকে দমানো সম্ভব না।
বিএনপি নেতা মিনুর বক্তব্যের বিষয়ে আসাদ বলেন, আজকে রাজশাহীতে তথাকথিত বিএনপির সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ৭৫ এর পনেরো আগষ্ট সৃষ্টির ঘোষণা দেন। মিনু ভাই, আপনি রাজশাহী মেয়র ছিলেন, এমপি ছিলেন, কিভাবে ছিলেন সব জানি। আবার আপনাকেই আমি দেখেছি, নিজের বাপকে বাদ দিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে বাপ বলতে। আবার আপনাকেই দেখেছি, রাজশাহীর সার্কিট হাউজে শেখ হাসিনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে নিজের মাথায় হাত নিয়ে আপনি বলতে চেয়েছেন, বড় বোন আপনি আমার জন্য দুয়া করে দেন। সেই মিনু যখন দাঁড়িয়ে বলে হাসিনা আপনার লজ্জা লাগে না। শেখ হাসিনা তো কোনদিন কারো কাছে মাথা নিচু করেনি। ইসরাইলের সাথে কার সম্পর্ক মিনু সাহেব, তুমি জানো না? তোমার যদি বুকের সৎ সাহস থাকে যেকোন জায়গায়, যেকোন অবস্থায়, যেকোন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করার জন্য কেন্দ্র আওয়ামী লীগের দরকার নেই, আমাদের মহানগর ও জেলার ছাত্রলীগই যথেষ্ঠ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বলি, মিনু সাহেব বক্তৃতা প্রত্যাহার করেন। যদি প্রত্যাহার না করেন, আপনার ম্যাডাম খালেদা জিয়া গিয়ে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়েছে, আপনি দেখেন নি? মিনু তুমি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারি ফারুকের চেয়ে বড় কেউ না। সেই ফারুক বলেছিল, “আমরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছি। পারলে কেউ কিছু করুক।” পরে সেই ফারুকই জেলা খানায় কেঁদেছিল। রাজনীতি করেন রাজনীতির ভাষায় কথা বলেন। আর যদি অন্য ভাষায় যেতে চান। আমরা ৭৫ এর পরে আপনার মত মিনুকে সেই পথে আবার মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি।
রাজনীতির অভিজ্ঞতা বিষয়ে আসাদ বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে যুব রাজনীতিতে আসলাম। আমি যুবলীগ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের খুব বকা খেয়েছি। ইফতারি হাতে নিয়েও নেতাদের চাপে তানোর থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে। প্রবীণ নেতারা বলতেন, শেখ হাসিনাকে নিয়ে ক্ষমতায় যাবো, কিন্তু রাজশাহীতে এমপি করা যাবে না। কেন এমপি করা যাবে না? ব্যাখ্যা দিত না।
প্রবীণ নেতাদের অপদস্তের কথা তুলে ধরে আসাদ বলেন, আতাউর রহমান খাঁনরা যখন ফারুক চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে গলা ধাক্কা খান, তখন তারা বাহিরে এসে কাঁদেন। এদের চোখের পানির দাম কী আল্লাহ দিবেন না? আবার সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে মেয়রের কাছে অপমানিত হয়ে আওয়ামী লীগের মুরব্বিরা ফেরত আসেন, সেটিও কষ্টের বিষয় হয়। আবার হঠাৎ করে আসা মন্ত্রী শাহরিয়ারের কাছে যখন প্রবীণ নেতারা যান, সে তখন বলে আপনি কে? তাকে যখন পরিচয় দিতে হয়। আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে কথা বলতে হয়। সেই মানুষগুলোর প্রশ্নের জবাব কে দিবে? কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আপনি যখন বলেন, হাইব্রিড কাউয়া দলে জায়গা হবে না। ঠিক তখনই হাইব্রিডদের প্রভাব ততই বৃদ্ধি পায়।
আরবিসি/০৬ মার্চ/ রোজি