আরবিসি ডেস্ক : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। সম্প্রতি ঘটা করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুরু করে দলটি। ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের ব্যানারে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কোনো ছবি ছিল না। এমনকি শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যেও অনুচ্চারিত ছিল সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নাম।
কর্মসূচি নিয়ে উত্তাপ ছড়ালেও ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা এবং নেতাদের বক্তব্যে নেত্রীর প্রসঙ্গ না আসায় বিএনপির বিএনপির অভ্যন্তরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনুষ্ঠানে নেতাদের বক্তব্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রওতিবাদ থাকলেও, তারা দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত দলনেত্রীর কোনো বিষয়ই বক্তব্যে আনেননি।
বিএনপির যেকোনো কর্মসূচি, ব্যানার-ফেস্টুনে সবসময় জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি শোভা পায়। দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর সব অনুষ্ঠানে তার প্রতি সম্মান জানিয়ে একটা চেয়ার ফাঁকা রাখা হতো। কিন্তু গত সোমবারের সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তা ছিল না।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সারির নেতা ও শুভানুধ্যায়ীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে সমালোচনা করায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সমালোচকদের কারো কারো আশঙ্কা এক-এগারোর মতো দলের একটি পক্ষ খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাসের চেষ্টা করছে। কেউ কেউ এমন কাজের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করছেন।
এছাড়াও সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলের শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়েও সম্প্রতি কথা বলতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করারও তাগিদ দিচ্ছেন অনেকে। শীর্ষ নেতাদের শুধু পদ দিয়ে বসিয়ে না রেখে দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দিতে দলের মহাসচিবের কাছে প্রকাশ্যে দাবি করছেন নেতারা।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বলেন, ‘স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে আমরা যারা আছি, আমাদের দায়িত্ব না দিয়ে বসিয়ে না রেখে বলেন দায়িত্ব ভাগ করে দেন। সব কাজ সবাইকে দিয়ে একসঙ্গে হবে না। যাদের মনে করেন যোগ্য, তাদের সিলেক্ট করেন।’
এদিকে দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে এ নিয়ে আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের দাবি, সচেতনভাবেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি না দিয়ে শুধু জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
অবশ্য এ বিষয়টির একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে বিএনপি গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও দলের চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমান মানেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বাংলাদেশ মানেই জিয়া। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে শুধু দলের প্রতিষ্ঠাতাকে ফোকাস করতে চেয়েছি। এ কারণে দলীয় চেয়ারপারসনের ছবি ব্যবহার করা হয়নি। এ কারণে তারেক রহমানের ছবিও ব্যবহার করা হয়নি।
তবে দলের ভিতরে সমালোচকরা আবদুস সালামের এ ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেছেন, ‘বদলে যাওয়া এ এক অন্য রকম বিএনপি। সব আছে, সবাই আছে, শুধু নেই বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ও নামটি।’
তার ভাষ্য, ‘তথাকথিত এক-এগারোর ট্রমা থেকে বিএনপি এবং এই দলের নেতা-কর্মীরা আজও মুক্ত হতে পারেনি। ওই আঘাত বিএনপিকে যেভাবে পঙ্গু করেছে, সেই পঙ্গুত্ব নিয়ে আজও খুঁড়িয়ে চলছে দল।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন সহ-সম্পাদক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছবি না রাখা সাদা চোখে স্বাভাবিক মনে হলেও মাঠ পর্যায়ের কেউ এটাকে ভালো ভাবে নেয়নি। দলের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। তা না হলে সামনে আরো খারাপ পরিস্থিতি হবে।’
এদিকে সুবর্ণ জয়ন্তীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে আলোচনার জন্য অতিথি নিয়েও সমালোচনা তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা সভায় তরুণ নেতাদের অতিথি হিসেবে রাখা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আয়োজনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পুরো আয়োজনে সক্রিয় থাকা বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এত গভীরভাবে ভাবা হয়নি। অবশ্যই ভাবা উচিত ছিল। সুবর্ণজয়ন্তীর বাকি আয়োজনে এমন সমস্যা যেন না হয় সেভাবে কাজ করা হচ্ছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, অনেক বড় আয়োজনে ভুলত্রুটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আর এ নিয়ে কষ্ট পাওয়াও দোষের কিছু নয়। বাস্তবতা হলো জিয়া পরিবার ছাড়া বিএনপিকে ভাবা যায় না। আমরা দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সবসময় এই পরিবারকে ধারণ করি।’
দলের নেতাকর্মীদের ভাবাবেগকে মূল্য দিয়ে ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ণ করার পাশাপাশি আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করে তার যথোপযুক্ত সুরাহা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
্রআরবিসি/০৫ মার্চ/ রোজি