স্টাফ রিপোর্টার : অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে যারা লুট করছে, তাদের ‘নতুন রাজাকার’ বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ কারও জমিদারি হয়ে যায়নি। এই দেশ কোনো ‘বিজনেস বা করপোরেট গ্রুপের লুটপাটের লীলাভূমি’ নয়।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন রাজশাহী-২ আসনের এ সাংসদ। বান্দরবানের চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের নামে ম্রো আবাসভূমি বেদখলের প্রতিবাদে ‘চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো ভূমি রক্ষা আন্দোলন’ ব্যানারে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন সংগঠন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সেখানে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘চিম্বুক পাহাড় বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য। সেখানে সিকদার গ্রুপের মতো একটি দুর্বৃত্ত ব্যবসায়িক গ্রুপকে হোটেল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই দুর্বৃত্ত ব্যক্তিরা আজকে রাষ্ট্রের মালিক বনে গেছেন। পাকিস্তানের যে ২২ পরিবার বাংলাদেশ লুট করেছিল, তাদের আমরা রাজাকার বলেছিলাম। আজকে নতুন রাজাকারদের হাতে আমরা দেশকে ছেড়ে দিতে চাই, যারা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে লুট করতে চায়।’
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কোনোভাবেই এটা তাঁরা হতে দেবেন না। সংসদ থেকে যদি ১, ৫ বা ১০ জনও হয়, তাঁরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের সঙ্গে আছেন। সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তাঁরা রাজপথে নামবেন। বাংলাদেশ কারও জমিদারি হয়ে যায়নি। এই দেশ কোনো বিজনেস বা করপোরেট গ্রুপের লুটপাটের লীলাভূমি নয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করা রাষ্ট্রের অঙ্গীকার। একের পর এক বনে যদি ইকো রিসোর্ট-পাঁচ তারকা হোটেল হতে থাকে, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পাহাড় আর বন কীভাবে থাকবে?
সমাবেশে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘বান্দরবান নিজেই পাঁচ তারকা হোটেল, পুরো বান্দরবানই একটা ইকো রিসোর্ট। সেখানে আবার ইকো রিসোর্ট বানাতে হবে কেন? ওরা যেন কোনোভাবে এ কথা ধরে না নেয় যে আমরা ভয়ে চুপ করে আছি।
একটা পর্যায়ে মানুষ ভয়কে জয় করবেই। পদ্ধতিগতভাবে সঠিক থাকতে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে লিখেছি। তাদের কোনো বিবৃতি আমরা পাইনি। আমাদের কথা না শুনে বলা যাবে না যে আমাদের মতামত আছে। জাতিসংঘও ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আপত্তি দিয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠে গেছে। সরকারকে আমাদের কথা শুনতে হবে।’
নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, যতই পাঁয়তারা চলুক, চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারা হোটেল হবে না, করতে দেব না। সারা বিশ্বের পরিবেশবাদী মানুষ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। উন্নয়ন মনেই দালানকোঠা নয়। মানুষকে গৃহ থেকে উচ্ছেদ করে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ করতে হবে কেন?’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, জাতিসত্তার মানুষ নিজের মতো বাঁচতে চান। এটা কি কোনো মানুষের জন্য বড় দাবি? মানুষকে উচ্ছেদ করে উন্নয়নের নামে এতগুলো মানুষের জীবন বিপন্ন করা কোনো গণতান্ত্রিক জনদরদি সরকার মেনে নিতে পারে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে দেশে নাগরিকেরা উচ্ছেদ হবেন, এটি কোনোভাবেই হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস ও জোবাইদা নাসরীন, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, নারীমুক্তি কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় এলাকা থেকে ম্রো জনগোষ্ঠীর একটি দল এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়। বাঁশির সুরে নিজেদের দুর্দশা ও দাবির কথা জানায় তারা। ম্রো ভাষায় বক্তব্যও দেন তাদের একজন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিতে তাঁর কার্যালয়ে যায়। অন্যরা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে ফের শাহবাগে এসে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধিদল ফেরার পর তাঁরা আজকের কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করবেন বলে জানান সঞ্জীব দ্রং।
আরবিসি/০২ মার্চ/ রোজি