স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরেই একজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখে ভালো একটা চাকরির। একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি এসময় চাকুরির পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। মধ্যবিত্তরা চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মাসের খরচ বাবদ বাবার দেয়া টাকা থেকে কিছু অংশ বাঁচিয়ে প্রতিমাসে কিনে নতুন নতুন বই। তবে লাইব্রেরীগুলোতে বইয়ের দাম দিন দিন বৃদ্ধির ফলে হয়ত নতুন বই কিনতে কষ্ট হয় অনেক শিক্ষার্থীর। পিছিয়ে পড়ে অনেক মেধাবী।
তবে এমন হাজারো গরীব মেধাবি শিক্ষার্থীদের বইয়ের জোগান দিচ্ছে রাজশাহীর একটি লাইব্রেরী। লাইব্রেরীটির নাম ‘ব্যতিক্রম লাইব্রেরী’। এখানে প্রয়োজনীয় সকল বই বিক্রি হয় কেজি দরে।
রাজশাহী শহর থেকে ৫কিলোমিটার পূর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের পশ্চিমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশেই এই লাইব্রেরী অবস্থিত। বিনোদপুর বাজার থেকে একটু পশ্চিমে এসে হাতের বামদিকে দেখা যাবে ‘ব্যাতিক্রম লাইব্রেরী’র ব্যানার। ব্যানারের পাশে গলি ধরে এগুলেই চোখে পড়বে লাইব্রেরীটি।
যেখানে করোনার পূর্বে বইয়ের কেজি ছিল মাত্র ৬০ টাকা, আর মাসের শেষ দিনে ছিল ৩০ টাকা কেজি। তবে বর্তমানে বইয়ের কেজি এক’শ টাকা এবং মাসের শেষ দিনে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী সেই লাইব্রেরীতে তাদের পছন্দের বই খুঁজতে ব্যস্ত। বই প্রিয় শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ধরে তাদের প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ করার পর দোকানে রাখা ডিজিটাল মেশিনে ওজন করে নিচ্ছে।
কথা হয় লাইব্রেরীতে বই কিনতে আসা আছিয়া খাতুনের সঙ্গে। আছিয়া রাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি প্রায়ই বই কিনতে আসি এই দোকানে। এখানে এসে পছন্দের বই নিয়ে যাই। অল্প টাকায় বেশ ভালো বই পাওয়া যায়।
বই কিনতে আসা বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মিনহাজ আবেদিন বলেন, আমি একাডেমিক বই কিনতে এসেছিলাম। বেশকিছু বই পেলাম। অন্যান্য লাইব্রেরীতে যেই বইগুলো বেশি দামে কিনতে হয়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বেশি দামে বই কেনা অনেকটা কষ্টকর। এখানে সেই বইগুলো কম দামে পেয়ে ভালোই লাগছে।
বই বিক্রেতা মো. মিজানউদ্দিন জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বই কিনতে আসে, সকালের তুলনায় বিকেলে বেশি ভীড় জমে দোকানটিতে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বইয়ের গ্রাহক কিছুটা কম থাকলেও করোনাকালের পূর্বে অনেক সময় বই কেনার জন্য দোকানের সামনে শিক্ষার্থীদের লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।
কি ধরনের বই পাওয়া যায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে গল্প, উপন্যাস, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, চাকরি-ভাইবা, ব্যাংক জবসহ ব্যবসা অনুষদের বইগুলো বেশি পাওয়া যায়।
কথা হয় দোকানের মালিক মো. বদর উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ৫ বছর পূর্বে শিক্ষার্থীদের কল্যানের উদ্দেশ্যে তিনি লাইব্রেরীটি প্রতিষ্ঠা করেন। রাজশাহী শহরসহ বিভিন্ন পুরাতন লাইব্রেরী থেকে তিনি এসকল বই সংগ্রহ করেন। পরে বইগুলোর প্রতি কেজি এক’শ টাকা এবং মাসের শেষ দিনে ৫০টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সময় ও শ্রমের অপচয় কমাতে বর্তমানে লাইব্রেরীর ২টি শাখা আছে। মূল লাইব্রেরী থেকে ভালো মানের বইগুলো বাছাই করে অপর শাখায় রাখা হয়।
শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। একাডেমিক অথবা চাকরির প্রস্তুতির জন্য অনেক বই প্রয়োজন যা একজন গরীব শিক্ষার্থীর পক্ষে কেনা কষ্টকর। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় এসব বই ব্যতিক্রম লাইব্রেরীতে পাওয়া যাচ্ছে এটা খুবই ভালো একটা বিষয়। এই উদ্যোগটি রাবিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
আরবিসি/২৭ ফেব্রুয়ারি/ রোজি