• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

‘পাট-চিনিকল খুলে না দিলে গণআন্দোলন’

Reporter Name / ১১৭ Time View
Update : শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : বন্ধ করে দেওয়া রাষ্ট্রায়ত্ব পাট ও চিনিকলগুলো অতি দ্রুত চালুর উদ্যোগ না নিলে কৃষক-শ্রমিকদের নিয়ে গণআন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।

শনিবার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘শ্রমিক-কৃষক সমাবেশে’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রয়ত্ত শিল্পকে ধ্বংস করা চলবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ধ্বংস হলে সংবিধান ধ্বংস হয়ে যাবে। কৃষক-শ্রমিকদের রেখে আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে যেতে পারি না। তাই শিগগিরই এসব কারখানা খোলার উদ্যোগ না নিলে গণআন্দোলন করে তা আদায় করা হবে।’

জাতীয় সম্পদ রক্ষা, বিরাষ্ট্রীয়করণ বাতিল এবং শিল্প-শ্রমিক-কৃষক রক্ষার দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ এবং বাংলাদেশ আখচাষী ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাট ও চিনিকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘করোনার মধ্যে শ্রমিকদের গুটিকয় টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাটকল বন্ধ করে দিয়েছেন। বিএনপির বিরুদ্ধে আমরা এত কথা বলি, তখন বিএনপি-জামায়াত আদমজী জুট মিলস বন্ধ করে দিয়েছিল। তাহলে কি ক্ষমতায় আজ বিএনপির ভুত আছে? পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কারা নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কাদের সিদ্ধান্তে চিনিকল বন্ধ করে দিয়ে আখ চাষীদের নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ এ নেতা আরও বলেন, ‘কিছু কিছু মন্ত্রী-এমপি বলেন, কলকারখানা লোকসানে যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে, অব্যবস্থাপনার কারণে কলখারখানা লোকসান করছে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কারখানা লোকসান করছে। আমলারা কি করেন, কেন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাননি, কেন লুটপাট, দুর্নীতি করে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন? এসময় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে চালু করার জন্য, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করারও আহ্বান জানান ফজলে হোসেন বাদশা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একটি আধুনিক শিল্প গড়ে তোলার জন্য বিরাট কিছু লাগে না। সবকিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রয়ত্ত ৬৫ চিনিকল পাটকল আছে। ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যায় করেই এগুলো আধুনিকায়ন করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।’

সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে এ শ্রমিক নেতা বলেন, ‘যদি না পারেন তাহলে আপনার পদ্মা সেতুর যে গর্ব, বড় বড় প্রজেক্টের যে গর্ব, ঢাকা শহরের উড়াল রেলের যে গর্ব সবকিছু ম্লান হয়ে যাবে। আপনি সংসদে বসুন। আগামী বাজেট অধিবেশনের আগে যদি এ প্রস্তাব না আনেন তাহলে কঠোর আন্দোলন তা আদায় করা হবে। শ্রমিকরা যদি একবার বেপরোয়া হয় তাহলে কিন্তু শান্তিতে অধিবেশন করতে পারবেন না।’

শ্রমিক-কৃষকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সময়ের মধ্যে লক্ষ শ্রমিক-কৃষকের সমাবেশ করব। যারা আসছেন তারা প্রস্তুত হন। জীবন দিয়ে হলেও তা আমরা বাস্তবায়ন করব।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আখচাষী ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম খলীল। বক্তব্য রাখেন- মুস্তফা লুৎফুলা এমপি, মাহমুদুল হাসান মানিক, শ্রমিকনেতা মছিউদদৌলা, আসলাম খান, খুলনা-যশোর শিল্পাঞ্চল নেতা হারুন রশিদ মল্লিক, শ্রমিক নেতা দিদারুল আলম, মিজানুর রহমান, শহীদুল ইসলাম হীরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রমিকনেতা মোবারক হোসেন, শ্যামপুর চিনিকল রক্ষা কমিটি আহবায়ক আলতাফ হোসেন।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন শ্রমিকনেতা কামরুল আহসান। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন চিনিকল ও আখচাষী রক্ষা কমিটির নেতা সুকুমার সরকার। বন্ধ করে দেওয়া পাট ও চিনিকল চালুর জন্য ৯ দফা দাবি তুলে ধরে সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৬ মার্চ দেশের সব পাট-চিনিকল ও আখচাষ এলাকায় অবস্থান এবং একই দিনে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংহতি সমাবেশ।

সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। সমাবেশ শেষে লাল পতাকার একটি বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুরানা পল্টনে গিয়ে শেষ হয়।

আরবিসি/২৭ ফেব্রুয়ারি/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category