স্টাফ রিপোর্টার : বদীউজ্জামান জনি (২৪) রাজশাহী মহানগর পুলিশের রাজপাড়া থানার একজন কনস্টেবল। ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভা নির্বাচনে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছে তার বাম হাত। অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছে তার হাত।
জনি জানান, ওই দিন ভোটগ্রহন শেষে তেঘর সরকারি মাদ্রাসা কেন্দ্রের ব্যালটবাক্স নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। চারদিকে অন্ধকারে ঢেকে গেছে। এরই মধ্যে পুলিশের ইমা গাড়িতে যাত্রা শুরু করেন তারা। এসময় কিছু উচ্ছৃংখল জনতা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে পুলিশের গাড়ি। কিছু বুঝে উঠার বৃষ্টির মত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পূর্বেই ইটের পাটকেল বৃষ্টির মতো নিক্ষেপ করতে শুরু করে।
তবুও বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে পুলিশের গাড়িটি। দুর্বৃত্তরা ইট-প্যাটকেল নিক্ষেপ করে আর খুব দ্রুততার সাথে পথ রোধ করার চেষ্টা করে। রাস্তায় ইটের ব্যারিকেডসহ দুই পাশে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। তৈরি করে ভীতিকর পরিবেশ।
জনি আরও জানান, মাথায় হেলমেট আর শরীরে বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট থাকায় সে যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাত পান। অবৈধ জনতাকে চেঁচিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে গেলে তারা আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।
অবশেষে সরকারি ব্যালট বাক্সগুলো সুরক্ষিত রাখা ও সহকর্মীদের জীবন বাঁচানোর জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে আক্রমণকারীদের দিকে এগিয়ে যান জনি। তাদেরকে শান্ত করতে কথা বলতে থাকেন এবং এগুতে থাকেন। পায়ে হেঁটে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।
কিন্তু তারা কোন কথাই কর্ণপাত না করে পুলিশের উদ্দেশ্যে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পাশাপাশি ইট নিক্ষেপণ বাড়িয়ে দেয়। অনন্যপায় হয়ে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে অবগত করেন পুলিশ সদস্যরা। জীবন রক্ষার্থে সর্বোাচ্চ শক্তি প্রয়োগ করার মৌক্ষিক অনুমতি পান।
জনি বলেন, শক্তি প্রয়োগের অনুমতি পেলেও মানবিক কারণে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ থেকে সরে আসি। আমরা চেষ্টা চালায় কথা আর অনুরোধের মাধ্যমে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ও আক্রমণকারীদেরকে শান্ত করার।
জনি বলেন, কিন্তু হঠাৎ করে একটি ভাঙ্গা ইট আমার বাম হাতের কবজিতে এসে সজরে আঘাত হানে। আরও কয়েকটি ইট আমার বাম বাহু ও হাতে লাগে। তখন কিছু বুঝতে না পারলেও পরে হাত এক্সরে করে বৃদ্ধাঙ্গুলে ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে। এছাড়াও হাতের রক্তনালি বা রগটা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
জনির চিকিৎসক লায়ন্স হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স কনসালটেন্ট ডা. সাঈদ আহমদ বলেন, উনি আমার কাছে আসেন হাতে প্লাস্টার নিয়ে। উনার বাম হাতের কবজিতে গুরুতর আঘাত লেগেছে। কোন অনুভূতি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। স্নায়ুতে আঘাতজনিত কারনে অনেক সময় অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে। চিকিৎসা চলছে, ওষধ দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে অবস্থার উন্নতি না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জীবন যখন সঙ্কটে তখন কেন শক্তি প্রয়োগ করেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে জনি বলেন, জনগণের সেবা করা ছাড়াও অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করা ও মাদক নির্মূলে অংশগ্রহণ করার প্রবণতা নিয়েই পুলিশবাহীনিতে যোগ দিয়েছি। দেশমাত্রিকার সেবক হিসেবে তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে সকলের সেবা প্রদানের ইচ্ছা পোষণ করি। সেদিন আঘাত পাবার পরেও সাহসিকতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি ধন্য ও গর্বিত।
রাজপাড়া জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার উদয় কুমার সাহা বলেন, জনি আমার অফিসে কাজ করে। ওই দিন নির্বাচনে ডিউটি পালন করতে গিয়ে গুরুতর চোট পেয়েছে। চিকিৎসাধীন বিশ্রামে রয়েছে।
কন্সটেবল জনির বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া থানা দোহাকুলা গ্রামে। ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। চাকুরীর প্রথমবস্থায় চট্টগ্রামের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশে ছিলেন। ২০১৭ সালে প্রেষণের মাধ্যমে আরএমপির রাজপাড়া থানায় যোগদান করেন।
আরবিসি/২৪ ফেব্রুয়ারি/ রোজি