• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন

অমর একুশে আজ

Reporter Name / ৯৫ Time View
Update : রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের অবিনাশী চেতনায় নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার বিশেষ দিবস। ‘মাথা নত না করা’র অমর একুশে।

প্রভাতফেরি, প্রভাতফেরি/আমায় নেবে সঙ্গে,/বাংলা আমার বচন, আমি/জন্মেছি এই বঙ্গে…। বঙ্গভূমি আর বাংলা বচন নিয়ে গর্বিত বাঙালী আজ দলে দলে যোগ দেবে প্রভাতফেরিতে। ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেবে শহীদ মিনার। আজ সর্বত্র সকলের কণ্ঠে গীত হবে অভিন্ন শোকসঙ্গীত : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।’ ‘তোমার কোলে তোমার বোলে কতই শান্তি ভালবাসা…।’ সেই অপার শান্তি পবিত্র ভালবাসা আরও গভীরভাবে অনুভব করার আবেগঘন দিনটি আজ। আজ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালীর ভাষা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পালন করবে দিবসটি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষায় বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল বাঙালী। বরকত সালাম রফিক শফিক জব্বারদের প্রাণের বিনিময়ে লেখা হয়েছিল নতুন ইতিহাস। পাকিস্তানী শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে উর্দুর আগ্রাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করেছিল এ মাটির সন্তানেরা। শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুখিনী বর্ণমালা। শুধু ঢাকায় নয়, বাংলার প্রতি ঘরে বুনা হয়েছিল একুশের রক্তবীজ। বায়ান্নর সে বীজ থেকেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম।

আজ যখন এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, যখন বিদেশে বসে চলছে নানা অপতৎপরতা, যখন একের পর এক রটনা, গুজব, ধর্মের নামে উস্কানি, অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা তখন আরও সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বানে পালিত হচ্ছে অমর একুশে।
আজ নিজের ভাষার শক্তি ও সংস্কৃতির আলোয় নতুন করে জেগে ওঠার দিন। সমাজের সকল অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শপথের দিন। করোনাকাল চলমান থাকায় এবার সশরীরে শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকছেন না রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সর্বত্র ওড়ানো হবে শোকের কালো পতাকা। বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতিসত্তার যে স্ফূরণ ঘটেছিল তা-ই পরবর্তীতে বাঙালীর জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক প্রেরণা জোগায়। নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানানোর বিশেষ অনুপ্রেরণা হয়ে আসে ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষার অধিকারের পক্ষে লড়ার পাশাপাশি, ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন শোষণের বিরুদ্ধে একুশ ছিল বাঙালীর প্রথম প্রতিরোধ। নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সংগ্রাম হিসেবেও এর রয়েছে আলাদা তাৎপর্য।

ইতিহাসটি আর অজানা নয় কারও। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়। জন্ম নেয় পৃথক দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের দুই অংশ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্বাঞ্চলের মানুষ বাঙালী। মাতৃভাষা বাংলা। অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চলে প্রচলিত ছিল সিন্ধী, পশ্তু, বেলুচ, উর্দুসহ আরও কয়েকটি ভাষা। এ অবস্থায় পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ নেতৃত্ব সমগ্র পাকিস্তানের আনুমানিক পাঁচ শতাংশের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত শুরু করে। অথচ তারও অনেক আগে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। মায়ের ভাষার প্রতি বাঙালীর অনুভূতি কত তীব্র ছিল তা জানিয়ে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেন : যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি…। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই অনুভূতি স্পর্শ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এ অঞ্চলের মানুষকে পেছনে ফেলে রাখার প্রাথমিক ষড়যন্ত্র হিসেবে ভাষার ওপর আঘাত হানে। মায়ের ভাষা বাংলা মুখ থেকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সকল অনুভূতি তুচ্ছ করে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা আসতে থাকে শীর্ষ মহল থেকে। এমন ষড়যন্ত্রে হতবাক হয়ে যায় বাংলার মানুষ। বাঙালীর সে সময়ের মনোজগত তুলে ধরে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘মাগো, ওরা বলে/সবার কথা কেড়ে নেবে।/তোমার কোলে শুয়ে/ গল্প শুনতে দেবে না।/বলো, মা,/ তাই কি হয়?’

এর পরও নিজেদের সিদ্ধান্তে স্থির থাকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। গণচেতনাকে স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় বাঙালীর সামনে দুর্বার আন্দোলনের বিকল্প ছিল না। ১৯৪৮ সাল এবং ১৯৫২ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম তার প্রমাণ। বিশেষ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানীদের গোয়ার্তুমির চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে। এদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি রুখতে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। কিন্তু সকল ভয় জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে। বাংলার দাবি চিরতরে স্তব্ধ করতে মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, শফিক, রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। রাজপথ ভেসে গিয়েছিল তরুণ তাজা খুনে। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রাজপথে নেমে আসেন।

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে অমর একুশে। আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ পালন করবে দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আরবিসি/২১ ফেব্রুয়ারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category