স্টাফ রিপোর্টার : ‘হিজড়া জনগোষ্ঠির মানুষ অন্য গ্রহের নয়। তারা কেউই হিজড়া হয়ে জন্ম নেয়নি। হিজড়া হওয়ার পেছনে তাদের নিজেরও কোনো হাত নেই। এটা পুরোটায় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তারা আমাদের মতই রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তাদেরও এই রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের মধ্যেই বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমরা পরিবারে থেকে বের করে দেওয়ার কারণেই তারা আজ উচ্ছৃঙ্খল। তাই তাদের মেনে নিতে হবে। পরিবারচ্যুত না করে তাদের পরিবারেই ঠাঁই দিতে হবে। তবে তারা আর চাঁদার জন্য মানুষের কাছে গিয়ে গন্ডগোল করবে না। কাউকে হয়রানিও করবে না’।
রাজশাহীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহীনির সঙ্গে হিজড়া সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কিত এক পরামর্শ সভায় পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ সবার প্রতি এই আহ্বান জানান। সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে রাজশাহী পুলিশ লাইনস ট্রেনিং সেন্টারে এই সভা হয়। বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি ও জাস্টিস প্রোগ্রাম অব ইউএনডিপির সহায়তায় শনিবার দিনব্যাপী এই পরামর্শ সভার আয়োজন করে।
পরামর্শ সভায় রাজশাহী জেলা পুলিশ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ডান্ট (পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ তারেকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আব্দুল বাতেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ট্রেনিং অ্যান্ড ক্যাপাসিটি ডেভলোপমেন্ট ম্যানেজার মেসবাহ ইউ আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন, দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা মঈন ও জয়িতা পলি খাতুন।
সভায় বলা হয়- সহশ্রাব্দের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি বাস্তবায়নে হিজড়া সম্প্রদায়েরও ভূমিকা রয়েছে। তাদেরে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা যদি উন্নয়নের বাইরে থেকে যায় তাহলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না।
এরই মধ্যে সরকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু আমরা এবং আমাদের সমাজ এখনও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি দেইনি। যে কারণে লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর এই মানুষগুলো তাদের প্রতিদিনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে ক্রমাগত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে, সম্প্রতি তারা বাংলাদেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায় হয়ে উঠেছে যা তাদের জীবন ও মর্যাদার অধিকার, খাদ্যের অধিকার, কাজের অধিকারসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে তাদের প্রতি আরও মানবিক হতে হবে। মনে রাখতে হবে- তারাও মানুষ। আর আইন সবার জন্যই।
সভায় পুলিশ কর্মকর্তারা দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণে সবার প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সবার অংশগ্রহণে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিশেষ আহবান জানান।
আরবিসি/২০ ফেব্রƒয়ারি/ রোজি