• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

মাছের ট্রাক, মাটির ট্রাক, গিলে খাচ্ছে রাস্তা-ঘাট

Reporter Name / ২৫৯ Time View
Update : শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে রাস্তা। আর সেই রাস্তা নিমিষেই ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহৃত দানবীয় যানবাহন মাছ ও মাটির ট্রাক। গোটা উপজেলা ব্যাপি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ এসব যানবাহন। তারা ভেঙ্গে চুরে একাকার করে দিচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নির্মিত নতুন নতুন রাস্তা-ঘাট।

বিষয়টি দেখার কেউ নেই। তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থেই সরকারের এমন কোটি কোটি টাকা ক্ষতি সাধন করে চলছেও কেউ তাদের বাধা দিচ্ছে না। সম্প্রতি বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ঘুরে এমন ভয়াবহ চিত্রই লক্ষ করা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এখন শুস্ক মৌসুমে বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে পুকুর দিঘী খননের মহোৎসব। যে যার মতো পারছে শত শত বিঘা দুই তিন ফসলী জমি পুকুর খনন করছে। সবচেয়ে বেশি পুকুর দিঘী খনন হচ্ছে উপজেলা যশোর বিলে।
পুকুর খননের এসব মাটি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। আর এসব মাটি পরিবহন করা হচ্ছে অবৈধ যানবাহনে যার স্থানীয় নাম কাঁকড়া। এ কাঁকড়াতে করে মাটি পরিবহনের ফলে সদ্য নির্মিত রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে চুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার ভবানীগঞ্জ-তাহেরপুর রাস্তা, তাহেরপুর শিকদারী রাস্তা, ভবানীগঞ্জ-গাঙ্গোপাড়া রাস্তা, ভবানীগঞ্জ মোহনগঞ্জ রাস্তা ও মোহনগঞ্জ তাহেরপুর রাস্তাসহ গোটা উপজেলার এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে মাটির ট্রাকের অবাধ চলাচল নেই।
ভবানীগঞ্জ বাজারের সিএনজি চালকরা জানান, আগে নতুন রাস্তা নির্মাণ হলে ৪-৫ বছর সেই রাস্তা দিয়ে নির্বিগ্নে চলাচল করা যেত। আর এখন নতুন রাস্তা নির্মাণের ২-৩ মাসের মধ্যেই মাটির ট্রাক ও মাছের ট্রাক চলাচল করায় রাস্তা ভেঙ্গেছুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
তারা জানান, এসব ট্রাকে অতিরিক্ত মাটি তুলে নিয়ে যাওয়ার ফলে রাস্তায় যত্রতত্র মাটি পড়ে বিভিন্ন যানবাহনের মারাত্বক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মাটি পড়ার ফলে অনেক যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। সিএনজি চালকসহ অন্যান্য যানবাহনের চালক ও সাধারণ পথচারিরা অবিলম্বে এসব মাটির ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রন করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এসব মাটির ট্রাক ছাড়াও উপজেলা ব্যাপি রাস্তার ক্ষতি সাধন করে চলাচল করছে মাছ পরিবহনের ট্রাকগুলো।

স্থানীয়রা জানান, বাগমারা থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে মাছ নিয়ে চলাচল করে প্রায় দেড় শতাধিক মাছের ট্রাক। এসব ট্রাকে অতিরিক্ত পানি তোলার ফলে ট্রাকগুলো চলাচলের সময় পানি ছিটকে রাস্তায় পড়ে তা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলেছে। এভাবে মাছের ট্রাকের পানি রাস্তায় পড়ে সবচেয়ে বেশি রাস্তা ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে ভবানীগঞ্জের ব্র্যাক মোড় ও পল্লী বিদ্যুতের সাব স্টেশন এলাকায়। এসব এলাকায় মাছের ট্রাকের পানি পড়ে ভবানীগঞ্জ তাহেরপুর রাস্তায় চলাচল এখন মারাত্বক ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
জনদুর্ভোগের এসব বিষয়ের সমাধান সম্পর্কে জানতে চেয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। দু-একজ ব্যক্তির এমন হীন স্বার্থে সরকারের এমন বিশাল ক্ষতি ও জনদূর্ভোগ কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বিষয়টি উপজেলার মাসিক সভায় তুলে ধরে অচিরেই এর সমাধান করা হবে।
বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, বিষয়গুলো পুলিশের একতিয়ারের বাইরে হলেও মাঝে মধ্যে মাটি পরিবহনের ওইসব অবৈধ ট্রাক (কাঁকড়া) গুলো নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করি। বিষয়টি আরো কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হবে।

অবৈধ এসব যানবাহনের তান্ডব বন্ধ ও জনগনের চলাচল নির্বিগ্ন ও রাস্তার পরিবেশ সুন্দর ও সুষ্ঠ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত রাস্তার ক্ষতিকারক এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রন করতে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।

রাস্তার ক্ষতি করে পুকুরের মাটি কোন ভাবেই ইটভাটায় নিতে দেওয়া হবে না। এছাড়া অচিরেই মাছের ট্রাকে অতিরিক্ত পানি না তোলার জন্য এবং মাছের ট্রাক থেকে পানি পড়া বন্ধে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হবে।

আরবিসি/২০ ফেব্রুয়ারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category