• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

আবারো খট্ খট্ শব্দে মুখরিত তাঁতপল্লী

Reporter Name / ১৩২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের তাঁতপল্লীগুলোতে প্রাণ ফিরেছে। কর্মহীন-বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকরা ফিরে পেয়েছেন তাদের কাজ। গত ১১ জানুয়ারি জেলার তাঁতপল্লী পরিদর্শনে বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনার কথা শুনে তাঁতশিল্পের উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দেন, বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। এতে বুক ভরা আশা নিয়ে দীর্ঘ ১০ মাস পর নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেছেন মহাজন ও শ্রমিকরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের হরিনগর তাঁতপল্লী ঘুরে দেখা যায়, মুঠা-মাকু-চরখার (সুতা বুনার বিশেষ যন্ত্র) শব্দ ও কাপড়ের নতুন রংয়ের গন্ধে মুখরিত তাঁতীপাড়া গ্রাম। সুতায় বেনারশী, কাতান, গরদ, মটকা, সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, মসলিন সিল্ক, থ্রি-পিস বুনতে শুরু করেছেন তাঁতশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। রেশম উন্নয়ন বোর্ড বলছে, করোনাকালীন সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাঁতশিল্পের উন্নয়নে সরকার তাদেরকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

গত ১২ বছর ধরে তাঁতশিল্পের সুতা বুনার কাজ করেন শুভাস। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই কাজেই নিয়োজিত আছি। করোনার সময়ে কাজ বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পড়ি। অন্য সব পেশার মানুষরা বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ পেলেও কাপড়ের অর্ডার না থাকায় আমাদের কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে হয়। পরিবার চালাতে ব্যাপক হিমশিম খেতে হয়েছে। অনেক সময় একবেলা খাবার জুটেছে, তো অন্য বেলা জুটেনি। তবে এখন টুকটাক অর্ডার শুরু হওয়ায় কাজ ফিরে পেয়েছি।

আরেক তাঁতশিল্পী সুশান্ত দাস জানান, দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর গতমাসের মাঝামাঝি আবারও কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র আড়ং আমাদের থেকে কাপড় কিনে নিচ্ছে। করোনায় এমন পরিস্থিতি হয়েছিলো, যে লবন ভাত খাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। এখন ভালো লাগছে, কারন কাজ শুরু করতে পেরেছি। তাঁতশিল্প নিয়ে আবারো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। দেব সিল্ক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ত্রিদেব দাস বলেন, আড়ং ছাড়া এখনো কেউ কাপড় নিতে শুরু করেনি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার এগিয়ে আসলে করোনাকালীন ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
মৌসুমী সিল্ক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী গদাধর দাস জানান, গত মাসে তাঁতপল্লীতে বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রী এসেছিলেন। তিনি আমাদের সকলের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেছেন।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনাকালে তাঁত সংশ্লিষ্টদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার তাদের পাশে রয়েছে। তাঁতশিল্পের জন্য বিনাসুদে ঋণের দাবি করলে মন্ত্রী ৪ শতাংশ হারে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে করোনাকালীন সময়ের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন প্রাথমিক তাঁতী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেম কুমার দাস বলেন, এ গ্রামে প্রায় দুইশ পরিবার সকলেই তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে প্রাচীন পদ্ধতিতে চলছে তাঁত বুননের কাজ।
অন্যদিকে, বর্তমানে সরকার যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তা অপ্রতুল। তাই প্রযুক্তি সহায়তা ও সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে টিকে থাকবে মৃতপ্রায় তাঁতশিল্প। বিদেশীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিদেশে তাঁতপণ্য রপ্তানিতে উদ্যোগ নিত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেশম বীজাগারের ফার্ম ম্যানেজার আফজাল হোসেন জানান, করোনায় তাঁতশিল্পে সংশ্লিষ্টদের দুরাবস্থার বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ ও সরকার অবগত রয়েছেন। তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও রেশম বোর্ড বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেশের সর্বোচ্চ রেশম উৎপাদন হয়।

আরবিসি/১৯ ফেব্রুয়ারি/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category