স্টাফ রিপোর্টার : চলতি রোপা-আমন মৌসুমেও কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে রাজশাহী খাদ্য অধিদফতর। সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ধান এবং সাত হাজার ৭১১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে এর বিপরীতে মাত্র ৮৫৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধান কিনতে সক্ষম হয়নি খাদ্য অধিদফতর।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নেই কোনো তৎপরতা। ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজারের দামের পার্থক্য, মিলারদের অসহযোগিতা ও স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষকরা বলছেন, বাজারে ধান বিক্রি বহুলাংশে সহজ ও জটিলতামুক্ত। সরকারি গুদাম ও বাজারের দরের পার্থক্য ১৭০-১৮০ টাকা। কম দামে সরকারি গুদামে কেন ধান বিক্রি করবেন বলে প্রশ্ন রাখেন কৃষকরা।
রাজশাহী খাদ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এরজন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয় নবেম্বর থেকে চলতি ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু এক মণ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য অধিদফতর।
অপরদিকে আতপ ও সেদ্ধ মিলিয়ে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সাত হাজার ৭১১ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৮৫৪ মেট্রিক টন চাল।
গত আমন মৌসুমে সেদ্ধ ও আতপ মিলিয়ে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ১৫ মেট্রিক টন। সেবার মাত্র পাঁচ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় খাদ্য দফতর। সেই সময় চাল ও ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে অস্বীকার করায় কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
শুধু আমন নয়, গত বোরো মৌসুমেও (২০১৯-২০) ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হয় রাজশাহী খাদ্য অধিদফতর। ১১ হাজার ৮২৫ মেট্টিক টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মজুতদার ও মিলারদের দাপটে মাত্র ৫৭৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল।
পাইকারী ধান ব্যবসায়ী ইসলাম হোসেন জানান, সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে কৃষকরা ধান বিক্রি করছেন না। ২৬ টাকা হিসেবে প্রতি মণ ধানের দাম পড়ে এক হাজার ৪০ টাকা। বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান দিচ্ছেন না।
রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং আহরণ ও ব্যয়ন কর্মকর্তা মো. শাহিদার রহমান বলেন, ‘কি কারণে ধান-চাল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় সেটা আপনিও জানেন। সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে ধান দিতে কৃষকরা স্বাভাবিকভাবে আগ্রহী নন। গত আমন মৌসুমে চার হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন আতপ ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আমরা শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট হাজার ৭৪৫ মেট্রিক টন। সেটাও শতভাগ পূরণ হয়েছে। এবার ধান-চালের দাম বেশি, তাই এমনটি হয়েছে।’
রাজশাহী অঞ্চলের খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রায়হানুল কবীর বলেন, ‘প্রতিমণ ধান কৃষকরা এক হাজার ৮০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বাজারে ধানের দাম বেশ ভালো থাকায় তারা সরকারি গুদামে ধান দিচ্ছেন না। ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার প্রধান ও একমাত্র কারণ এটি।’
উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলা খাদ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলায় তিন হাজার ৫৭ মেট্রিক টন চাল ৪৩৩ মেট্রিক টন গমের মজুদ রয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ২০ হাজার ১৯৯ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার ৬০ মেট্রিক টন গমের মজুদ ছিল। করোনা ভাইরাসের কারণে ধান-চালের মজুদ এবং সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরবিসি/১৬ ফেব্রুয়ারি/ রোজি