• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

বসন্ত এসে গেছে…

Reporter Name / ৩৪৩ Time View
Update : শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক : বসন্ত এসে গেছে! সত্যি তো এসে গেছে ঋতুরাজ। আজ রবিবার পহেলা ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। বসন্তের প্রথম দিন। ফাগুনের আগুন লাগা দিনে উৎসবে মাতবে বাঙালী।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশ প্রতি দুই মাস অন্তর রূপ পরিবর্তন করে। শুরু হয় গ্রীষ্ম দিয়ে। বসন্ত দিয়ে শেষ। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী এই বসন্ত। এখন বনে যেমন মনেও তেমনি আশ্চর্য দোলা। এরই মাঝে রূপ লাবণ্যে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। বৃক্ষের নবীন পাতায় আলোর নাচন। ফুলে ফুলে বাগান ভরে উঠেছে। চোখ খুললেই গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, পলাশ, পারিজাতের হাসি। মৌমাছির গুঞ্জন। কোকিলের কুহুতান। সব, সবই বসন্তকে আবাহন করছে। জানিয়ে দিচ্ছে- আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।

ফাগুনের এই ক্ষণে বিবর্ণ প্রকৃতি জেগে উঠেছে নতুন করে। বাগানে বাগানে ফুটেছে কুসুম। শিমুল, কাঞ্চন, মাধবী, কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে বন। কবিগুরু সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘ওরে ভাই, ফাগুন এসেছে বনে বনে-/ডালে ডালে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় রে,/আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে…।’ শুধু পাতা আর ফুলেরা কেন? আপন মনে গাইছে পাখি। কত কত গান! কবিগুরুর বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে বললেÑ আহা! আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…। অথবাÑ বসন্ত এসেছে বনে, ফুল ওঠে ফুটি,/দিনরাত্রি গাহে পিক, নাহি তার ছুটি …। বনের মতোই অনাদিকাল ধরে বাঙালীর মন রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বসন্ত। সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় অন্য সব অনুষঙ্গ ভুলে যান। অদ্ভুত সুন্দর তার বলাটি, ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত…।

বসন্তের বাতাসটুক পুরোদমে বইছে এখন। মাতাল করে তুলছে ফাগুন হাওয়া। ভেতরে অদ্ভুত এক পুলক। কী যেন চায়! কাকে যেন খুঁজে বেড়ায়! নিজের অজান্তে মন গুনগুন করে ওঠে : যদি তারে নাই চিনি গো সে কি আমায় নেবে চিনে/এই নব ফাল্গুনের দিনে…। সেই বুক ধুঁকপুক, সেই শিহরণ জাগানিয়া ফাগুন এসেছে। তাই তো ‘ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভাল!’

বসন্ত মিলনের বার্তা দেয়। ভীরু প্রাণে কেবলই বেজে যায় : মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে/মধুর মলয়সমীরে মধুর মিলন রটাতে। লোকজ সুরেও প্রতিধ্বনি হয় অভিন্ন বাসনা। আব্বাস উদ্দীনের কালজয়ী কণ্ঠ শোনায়, ‘সুখ বসন্ত দিলরে দেখা, আর তো যৈবন যায় না রাখা গো…।’ আর লোককবি শাহ আব্দুল করিম এ বসন্তেই গেয়েছিলেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…।’ আসছে কি সে ঘ্রাণ? একই অনুভূতি থেকে কবি মহাদেবসাহা লিখছেন: তোমার সঙ্গে প্রতিটি কথাই কবিতা, প্রতিটি গোপন কটাক্ষই অনিঃশেষ বসন্তকাল।’

বসন্তের আগমনে উচাটন হয়ে ওঠে মন। পুরনো বেদনা, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ভালবেসে এর পেছনে আবারও ছুটতে প্ররোচনা দেয়। পাখিরাও প্রণয়ী খোঁজে এ সময়। ঘর বাঁধে। মৌমাছিরা মধুর খোঁজে হন্যে হয়। এক ফুল থেকে ছোটে অন্য ফুলে। এমন ঋতু শুরুর দিনটি তাই যারপরনাই বিশেষ স্মৃতির। আমার প্রাণের ’পরে চলে গেল কে/বসন্তের বাতাসটুকুর মতো…। একেবারে প্রাণের ওপর দিয়েই বইছে বসন্তের বাতাস!

প্রিয় ঋতুকে আজ বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করে নেবে বাঙালী। কোভিডের কালেও, বসন্ত ঘিরে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। ফালগুনের প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকার অলিগলি রাজপথে ভিড় বাড়বে। রঙিন হয়ে উঠবে চারপাশ। সকাল হতেই বাসন্তী রং শাড়ি পরে বেরিয়ে পড়বেন তরুণীরা। কিশোরী মেয়েটিও খোঁপায় জড়িয়ে নেবে গাঁদা ফুল। বড়দের মতো শাড়ি পরে গন্তব্যহীন হেঁটে যাবে। ছেলেরা পরবে পাঞ্জাবি। দলবেঁধে ঘুরে বেড়াবে।

বসন্তের দিনে দেখা দিতে পারে প্রাচীন বেদনাও। রবীন্দ্রনাথ সে বেদনার কথা জানিয়ে বলছেন, ‘মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখ রাতের গান/ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান…।’ অন্যত্র কবিগুরু বলছেন, বলা: ‘অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে/আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে-/দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া/আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে…।’ সব মিলিয়ে অনন্য এক বসন্ত দিন কাটাবে বাঙালী।

আরবিসি/১৪ ফেব্রুয়ারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category