আরবিসি ডেস্ক : ভ্যাকসিন গ্রহণে গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে আনসার-ভিডিপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) ৪১তম জাতীয় সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছি। প্রতিটি মানুষ যেন করোনা ভ্যাকসিন নেয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকে ভয় পায়, সুঁই ফোটাতেও ভয় পায়। সে ক্ষেত্রে আপনারা গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন। আমরা চাই, সবাই টিকা নিক, সুরক্ষিত থাকুক। দেশের মানুষ যাতে এই মহামারী থেকে মুক্তি পায় তার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির যে কোনো প্রয়োজনে আনসার বাহিনী কাজ করেছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুন সন্ত্রাসের সময় মানুষের জানমাল রক্ষায় আনসার বাহিনীকে সম্পৃক্ত করেছি। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করেছে। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন সবাইকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান, তখন আনসার-ভিডিপির সদস্যরাও মুক্তির সে সংগ্রামে অংশ নেন। শুধু তা-ই নয়, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রও দেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘আনসার বাহিনী তাদের প্রতিটি কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করেছে। নানামুখী প্রশংসনীয় উদ্যোগ তারা নিয়েছে। বাল্য বিবাহরোধ, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন- এ ব্যপারে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এতে আরও বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিপথে না যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস, ভাষার আন্দোলনের মাস। এ মাসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই। তারা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করেছে। আমি তাদের স্মরণ করছি।’
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি আন্দোলনে আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এটি সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এর ৫০ হাজারের অধিক সদস্য সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন স্থাপনার দায়িত্ব পালন করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই বাহিনীর উন্নয়নের জন্য আমরাও নানা সময় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। পদোন্নতি, রেশন সুবিধা, চাকুরি স্থায়ীকরণ ও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেটাকে কাজে লাগাতে ব্যপক কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছি। তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য আমাদের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের সুযোগ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অবদান ও নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে এই বাহিনীতে নারীদের আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। গ্রামের মানুষদের আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। এই বাহিনীর জন্য আনসার-ভিডিপি ব্যাংক করে দিয়েছি। যাতে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারে। এটির ২৫৯টি শাখা রয়েছে। এই করোনা মহামারীতে সব ব্যাংকে বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। আনসার ভিডিপি ব্যাংককেও ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছি। যাতে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারাও বিশেষ প্রণোদনা দিতে পারে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একটা যায়গা গেলে কিছু কেনাকাটা করতে পারি। সেটা হলো এই সফিপুরের আনসার একাডেমিতে। কিন্তু এবার করোনার কারণে তো যাওয়া হলো না। এটি দুঃখজনক।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মুস্তফা কামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাহিনীর মধ্যে সাহসিকতা ও কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘সাহসিকতা পদক’ প্রদান করেন।
আরবিসি/১১ ফেব্রুয়ারি/ রোজি