আরবিসি ডেস্ক: সারাদিন যে যেখানেই কাজ করুক না কেন, রাতে তারা হয়ে ওঠেন দুর্র্ধষ ছিনতাইকারী। তারা ছিনতাইয়ের কাজটিও করতেন ছিনতাই করা পিকআপ ভ্যান বা ট্রাকে চড়ে।
রাজধানীর নির্জন জায়গাগুলো ছিল তাদের ছিনতাই কর্মকাণ্ডের স্পট। চক্রের সদস্যরা মূলত নিশাচর ছিনতাইকারী।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ একটি ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। গ্রেফতার আসামি শাওন আহম্মেদ জয়ের নেতৃত্বে ছিনতাই করতেন জাহিদুল ইসলাম, ইয়ামিন, হৃদয় ও বাবুল। তাদের মধ্যে কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ হোটেল বয়, কিংবা ডেকোরেশনের কাজ করেন। রাতে তারা নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হয়ে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই ও ডাকাতি করতেন।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি ভোর সোয়া ৪টায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এলাকায় ৬/৭ জন ডাকাত একটি পিকআপ গাড়ি দিয়ে দুই ব্যক্তির গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনসহ নগদ অর্থ ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় চকবাজার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলা গোয়েন্দা ডিবি লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত জানা যায় এ চক্রটি ওই ছিনতাই কর্মকাণ্ডে জড়িত।
এ ঘটনার তদন্তে নেমে মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাওন আহম্মেদ জয়, জাহিদুল ইসলাম, ইয়ামিন, হৃদয় ও বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ছিনতাই-ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দু’টি পিকআপ, একটি চাপাতি, তিনটি ছুরি ও ১১টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি ডিমবাহী একটি পিকআপ নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসছিল। পথিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে গাউসিয়া ফ্লাইওভার এলে ওই পিকআপের চালক নূর মোহাম্মদ ও পথচারী রিপনকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে ছিনতাইকারীরা ২২ হাজার ডিমবাহী একটি পিকআপসহ ৫২ হাজার টাকা, চারটি মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাজী মো. রিপন ও নূর মোহাম্মদকে স্থানীয়রা একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।
ডিএমপি গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার আসামিরা রাজধানী এবং আশপাশের এলাকা থেকে পিকআপ বা ছোট মাহেন্দ্র ট্রাক ছিনতাই করে। ছিনতাইকৃত ওই যানবাহনের মাধ্যমে রাত ১২টার পর তারা হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। রাজধানীর মাহখালী, সাভার, শাহআলী, মিরপুরের গুদারা ঘাট, শেরেবাংলা নগরসহ আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ এবং ভুলতা এলাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই ডাকাতি করতেন তারা।
চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে জানা যায়, ওই ডাকাতির ঘটনায় সাতজন ডাকাত অংশ নেন, যার মধ্যে উল্লিখিত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি অভিযুক্তসহ এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
গ্রেফতার আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্য মামলা রয়েছে। কিছুদিন আগে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় চক্রটির দলনেতা শাওন আহমেদ জয় জেলে গেছেন। জেলে বসেই তিনি ডাকাতি-ছিনতাই দলের সদস্য সংগ্রহ করেন। জেল থেকে বেড়িয়ে ফের শুরু করেন ছিনতাই-ডাকাতি। তিনি সর্বশেষ গত রাতে ফের গ্রেফতার হন।
ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটলেও পুলিশি অভিযোগ হয় খুবই কম। আবার কোনো চক্র গ্রেফতার হওয়ার পর বেশ অভিযোগ আসে। আমরা মহানগর এলাকাসহ এর আশপাশে এধরনের ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশকে জানান। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিয়মিত সিসিটিভি মনিটরিং করছি। তবে অভিযোগ না আসলে তো তদন্ত কাজও ব্যাহত হয়।
আরবিসি/১০ ফেব্রুয়ারি/ রোজি