স্টাফ রিপোর্টার : ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের আগমনে শীতে ঝরে পড়া পাতার শূন্যতা পূরণ করতে গজাবে নতুন পাতা। গাছের ডালে বসে কু-হু কু-হু কন্ঠে গান গাইবে কোকিল। ফুলে ফুলে ভরে যাবে বৃক্ষরাজি। লাল টুকটুকে রং ছড়িয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির জানান দিবে পলাশ। প্রকৃতি সাজবে নতুন সাজে। প্রাণ ফিরে পাবে হাজারো প্রজাতির গাছগাছালি।
প্রতি বছর ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে রং-বেরংয়ের সাজে সাজানো হয় রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসকে। লালরঙা ভবনগুলো পূর্ণ রাখে হলুদ বা বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় ফুল, মাথায় ফুলের টায়রা, আর হাতে কাচের চুড়িতে সাজে ছাত্রীরা। বাদ যান না শিক্ষিকারাও। পাশাপাশি বাসন্তীর সাজে ছাত্র-শিক্ষকদের গায়ে শোভা পায় হলুদ বা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি। পিছিয়ে থাকে না কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। দিনব্যাপী পুরো ক্যাম্পাস মেতে থাকে হৈ-হুল্লোড়ে। সবকিছু মিলেই রূপ নেয় বসন্তবরণ উৎসবে।
তবে এবার বসন্ত আসলেও এমন বর্ণিল সাজে সাজবে না বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠ। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে বাঙ্গালীর অন্যতম এই প্রাণের উৎসবে। পুরো ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ফুটেছে বাহারি ফুল। ফুলের সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রতিবছরই এই ফুল কাননে থাকে মানুষের পদচারণা। ফুলের সাথে সেলফি আবার, কখনো সেই ফুল ঠাঁই পায় খোপায়। এমন দৃশ্য এবছর আর চোখে পড়বে না।
সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক রাজশাহী কলেজেও বসন্ত বরণ উৎসবের সকল কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক।
তিনি বলেন, গত মার্চ মাস থেকে কোভিড-১৯ এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বসন্ত বরণ উৎসব অন্যান্য বছরের মত ব্যাপক আকারে করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ব্যাপক পরিসরে লোক সমাগম করার সরকারি নির্দেশনাও নেই। তারপরও বাঙালির ঐতিহ্য ও সত্তাকে ধারণ করে আমাদের সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র ও নৃত্য গোষ্ঠীর তত্বাবধানে সীমিত পরিসরে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বসন্ত উৎসব পালন করার কথা ভাবা হচ্ছে।
বর্ণিল আয়োজনে ভাটা পড়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে কলেজের পদার্থবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন স্বাধীন বলেন, প্রতি বছর পহেলা ফাল্গুন আমাদের কলেজে এক প্রাণ সঞ্চার করে। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি পড়ে বসন্তকে বরণ করি। করোনার সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করায় এ বছর আমাদের এক হওয়া হচ্ছে না। ভীষন মিস করব এবারের ফাল্গুন, মিস করব বন্ধুদের।
আর বাংলা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা ইসলাম ও সানজিদা আক্তার বলেন, সবুজ ক্যাম্পাসে বৃক্ষরাজি থেকে পুরনো পত্র পল্লব ঝরে পড়ে নতুন পাতায় জানান দিচ্ছে বসন্তের। ক্যাম্পাস জুড়ে লাল-হলুদ গাঁদাসহ হরেক রকম ফুলের সমারোহে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এক সাজ সাজ রব। তবে এবার এই সাজ সাজ রব বৃক্ষরাজিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি পেলে অন্যান্য বছরের মতো আবার আমরা এই বসন্ত বরণ উৎসব পালন করবো প্রান খুলে আনন্দ করবো বলেও আশাবাদী তারা।
এদিকে, আয়োজন যেমনই হোক এই দিন প্রানের কলেজে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হবে এটাই অনেক আনন্দের বলে জানান রাজশাহীতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা।
আরবিসি/ ১০ ফেব্রুয়ারি/ রোজি