স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রের চারটি বুথ থেকে তিন ঘণ্টায় করোনার টিকা নিলেন ১২০ জন। রবিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ১২০ জন করোনার টিকা নেন। প্রথম টিকা নেন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা।
এরপর পর্যায়ক্রমে টিকা নেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদারসহ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সরকারের বিভিন্নস্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।টিকা নিয়েছেন সাধারণ মানুষও।
পবার পারিলা থেকে টিকা নিতে এসেছেন কালচিকা গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, আমি কৃষিকাজ করি। আমার ছেলে ঢাকায় বেক্সিমকোতে চাকরি করে। সে আমার রেজিস্ট্রেশন করে দেয়। সেই আমাকে পাঠিয়েছে করোনার টিকা নিতে। করোনার টিকা নিতে এসে আমার মধ্যে কোনো ভয়ভীতি কাজ করেনি।
নগরীতে বসবাস করেন রমাচন্দ্র ঘোষ। তিনি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার। তিনিও করোনার টিকা নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, করোনার টিকা নিতে কোনো ভয় নেই। করোনার টিকা নেওয়ার কারণে বরং আমি সুস্থ থাকবো। টিকা নিতে এসে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সবাই করোনার টিকা নেন। করোনার টিকা নিতে কোনো ভয় নেই। আমি নিজে করোনার টিকা নিলাম যাতে অন্যকেও আমি করোনার টিকা নেওয়ার কথা বলতে পারি।
এদিকে রাজশাহী নগরীতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পুলিশ লাইন হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজশাহীতে প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন করেছেন সাড়ে ৭ হাজার মানুষ।
এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।
রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রাসিক এলাকার করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভাপতি মেয়র লিটন। রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে কনস্টেবল ফিরোজ কবির ১ম টিকা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, আজকে সারা বাংলাদেশব্যাপী করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ও কাঙ্খিত এ দিনটি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। করোনা নিয়ে যে উদ্বিগ্নতা ছিল, তা দরীভূত হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সচেতনতা সৃষ্টিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা করোনা পরিস্থিতি ভালোভাবে মোকাবেলা করছি। প্রথম দিকেই করোনার ভ্যাকসিনও পেয়েছি।
অপরদিকে রাজশাহীতে প্রথম করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
রবিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে তিনি করোনার টিকা নেন। এ সময় তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিন আমার কাছে নিরাপদ মনে হয়েছে। কোন ধরনের ব্যাথা অনুভব করিনি। ভ্যাকসিন নেয়ার পর কোনরকম অস্বাভাবিকও মনে হয়নি। তাই ভয় না পেয়ে সবার প্রতি আমি আহ্বান জানাব- ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন। করোনাকে পরাজিত করে সুস্থ থাকুন।
এমপি বাদশার টিকা নেয়ার পর তার সহধর্মিনী অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস এবং সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার করোনার টিকা গ্রহণ করেন। এরপর রামেক হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিতে শুরু করেন।
রাজশাহী শহরে মোট তিনটি কেন্দ্রে রবিবার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। অন্য দুটি কেন্দ্র হলো- বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল। বেলা ১২টায় পুলিশ হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার জানান, রাজশাহীতে উপজেলা পর্যায়ে ১০টি কেন্দ্রে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৯ উপজেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এর বাইরে গোদাগাড়ী উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা বিশেষায়িত হাসপাতালে টিকা দেয়া হচ্ছে।
আরবিসি/ ০৭ ফেব্রুয়ারি/ রোজি