রাবি প্রতিনিধি : টুকিটাকি চত্বর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চিরপরিচিত একটি চত্বর। প্রায় ৩৫ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির লাইব্রেরি চত্বরে ‘টুকিটাকি’ নামের ছোট্ট একটি দোকান চালু হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে টুকিটাকি নামটি ছড়িয়ে পড়ে। দোকানটি ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। ফলে সবার অজান্তেই একসময় লাইব্রেরি চত্বরটির নাম হয়ে যায় টুকিটাকি চত্বর।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকা এই চত্বরটিতে আছে শিক্ষাবিষয়ক সকল উপকরণসহ ছবি তোলার, ফটোকপির, অনলাইনে চাকরি খোঁজার বুথ এবং কুরিয়ার সার্ভিসের স্থায়ী দোকান। এছাড়া করোনাকালের পূর্বে ভাতের হোটেল থেকে শুরু করে শরবতের, মেয়েদের কাপড় এবং অলংকারের, বার্গারের, ডাবের পানির ভাসমান দোকান এমনকি ওজন মাপার ব্যবস্থা ছিলো চত্বরটিতে। চলতো দিনভর পড়াশোনাসহ যেকোনো বিষয় নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আড্ডা।
দুপুর হলেই শিক্ষার্থীরা খেতে আসতো তাদের সকলের পরিচিত বাবু কিংবা সবুজ ভাইয়ের ভাতের হোটেলে। উপরে মোটা পলিথিন টাঙানো এবং নিচে সারি সারি পাতানো বেঞ্চে নিজেদের মতো বসতো শিক্ষার্থীরা। হোটেলে খাবার খাওয়া হোক আর না হোক বসে চলতো জমজমাট আড্ডা।
জানা যায়, করোনাভাইরাস রোধে ও ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গত বছরের ২২ মার্চ ক্যাম্পাসের সকল ভাসমান দোকানপাট উচ্ছেদ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে দীর্ঘদিন যাবত মৃতপ্রায় অবস্থায় পরে ছিলো শিক্ষার্থীদের চিরচেনা এই চত্বরটি।
তবে দীর্ঘদিন জনশূন্য থাকা এই চত্বরটি আবারও প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে। ছোট পরিসরে চত্বরটিতে দুইটি দোকান চালু হয়েছে। ফলে আবারও জমে উঠেছে পূর্বের মতো সেই আড্ডা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চত্বরটিতে চা-বিস্কুট বিক্রি করছেন দোকানিরা। সামনে রাখা বেঞ্চে বসে চা পান করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জমে উঠেছে আড্ডা। একজন শিক্ষার্থী বলে উঠলেন, কিছুদিন আগে তো টুকিটাকি চত্বরটিকে চেনাই যাচ্ছিল না। পাশ থেকে আরেকজন বললেন, যাহোক দীর্ঘদিন পরে হলেও চত্বরটিতে বসে বেশ ভালোই লাগছে। এমনসময় তাদের আরও দুইজন বন্ধু এসে বসল তাদের সাথে। তাদের একজন দোকানদারকে ডেকে বললেন, বাবু ভাই আরও দুইটা চা দিবেন এই পাশে। পরে আবারও গল্প-আড্ডায় মেতে উঠলেন তারা।
অন্যপাশে একজন শিক্ষার্থী বসে চা পান করছিলেন। কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানতে পারলাম তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন পরে টুকিটাকিতে বসে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, প্রতিটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একটি ভালোবাসা এবং আবেগের জায়গা থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে সেটি হলো টুকিটাকি চত্বর। চত্বরটি দীর্ঘদিন যাবত ফাঁকা পড়ে থাকায় নিজের কাছে চিরচেনা এই জায়গাটি অচেনা মনে হতো। দীর্ঘদিন পর হলেও এ জায়গায় বসতে পারায় নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার দাবি থাকবে টুকিটাকি চত্বরটি যাতে পুনরায় উচ্ছেদ না করা হয়। কারন এটা আমাদের মুক্ত জ্ঞান চর্চার জায়গা। এটা আমাদের অনেকের জীবনের নানান ইতিহাসের সাক্ষী।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের মোখলেছুর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ৫ মাস যাবত রাজশাহীতে অবস্থান করছি। ঘুরতে বের হলে কোলাহল কম থাকায় ক্যাম্পাসটাকে মৃতপ্রায় মনে হতো। তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে, দোকানপাটের সংখ্যাও বাড়ছে। এতে অনেক ভালো লাগছে।
করোনার পূর্বে টুকিটাকিতে ভাতের হোটেল থাকলেও গত কয়েকদিন থেকে চত্বরটিতে চা-বিস্কুট বিক্রি করছেন বাবু মিয়া। তিনি জানালেন, ভাতের হোটেলটি চালিয়েই তাঁর সংসারের চাকা ঘুরত। তবে করোনার পরে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছিল তাকে। শেষে আর সইতে না পেরে পুনরায় চা-বিস্কুট বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। এতে দৈনিক সাত শ থেকে আট শ টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে তাঁর।
পাশের আরেকজন দোকানদার সবুজও জানালেন একই কথা, কোনো উপায় অবলম্বন না পেয়ে তিনি পুনরায় দোকান নিয়ে বসেছেন এখানে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমরা চাচ্ছি একটা গোছালো এবং দৃষ্টিনন্দন টুকিটাকি চত্বর। যাতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয় পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে চত্বরটিতে যত্রতত্র দোকান না রেখে কিছু গোছালো দোকান রাখা দরকার। এ বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট দপ্তরে প্রস্তাব দিয়েছি। তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন।
আরবিসি/০৭ ফেব্রুয়ারি/ রোজি