• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন

হার না মানা অদম্য এক বিউটির গল্প

Reporter Name / ৩২৯ Time View
Update : রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

রাবি প্রতিনিধি : মানুষ সামাজিক জীব। জীবন পরিচালনার প্রতিটি পদে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয় অনেক বাধা-বিপত্তির। নানা ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত পেরুতে হয় প্রতিটি মানুষকে। কেউ অল্পতে হাল ছেড়ে দিয়ে থেমে যান। কেউ থামেন না। কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারে না তাদের। সব বাধা পেরিয়ে যারা সফল হন, তারাই অদম্য মেধাবী। আর এই সফলতার গল্পগুলো মানুষকে স্বপ্ন দেখায়, হয়ে ওঠে অনেকের অনুপ্রেরণা। তাদেরই একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বাসিরাতুন জান্নাত বিউটি।

জন্ম থেকে দুই হাত নেই তার। আছে শুধু দুই পা। দুই হাত না থাকায় জন্মের পর দেখেছেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা। তবুও থেমে যাননি তিনি। ইচ্ছে ছিলো ভালোভাবে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবেন। তাঁর ইস্পাত কঠিন মনোবল, অদম্য উৎসাহ, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর একনিষ্ঠতার কাছে কোন প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি। কেউ তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। পা দিয়ে লিখেই নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের বায়েজিদ ও রহিমা দম্পতির গরিব ঘরের মেয়ে বিউটি। তার বাবা একজন কৃষক, মা গৃহিণী। পরিবারের পাঁচ সদস্যদের মধ্যে বিউটি সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহী ছিলেন তিনি। হাত না থাকলেও দুই পায়ের জোরে (পা দিয়ে লিখে) পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। এইচএসসিতে পেয়েছেন ‘এ’ গ্রেড। এখন পড়ছেন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিনোদপুরের মির্জাপুর এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন বিউটি ও তাঁর মা। করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন তারা। বিউটির মা রহিমা বেগম বলেন, আমার মেয়ের সমস্যার কারণে সব সময় তাঁর সাথেই থাকতে হয়। সকালে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাই আবার নিয়ে আসি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এখন বাসা ছেড়ে দিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকছি। প্রথমে মেয়েকে নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলাম। এখন স্বপ্ন দেখছি, আমার মেয়ে একদিন জজ হবে।

ছোটবেলায় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও বিউটি এখন স্বপ্ন দেখেন আইনজীবী হওয়ার। তিনি বলেন, এসএসসি শেষ করার পর স্বপ্ন দেখতাম শিক্ষক হবো। এখন যেহেতু আইন বিভাগে পড়ছি সে সুবাধে দেশের স্বনামধন্য একজন আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে তো রয়েছেই। ভবিষ্যতে কি করবো বা কি হবো এখনও সেভাবে ভাবিনি। এখনো মনে হয় জজ হবো, কখনো তো অন্যকিছু। তবে এমন কিছু করবো যার মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে পারবো।

বিউটি আরও বলেন, আমার এতদূর আসার পেছনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার পরিবারের। তারা সহযোগিতা না করলে আমি আজকে এই অবস্থানে আসতে পারতাম না। সেই ছোটবেলায় স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষক, বন্ধুদের অনেক সাহায্য পেয়েছি। আমার পরিবার, প্রতিবেশী সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করছে। সবার ভালবাসা ও সহযোগিতায় আজ আমি এতদূর আসতে পেরেছি।

অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় দৃঢ় ইচ্ছে শক্তি আর অধ্যাবসায় দ্বারা। তাই করে দেখিয়েছেন রাবির এই অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী। দুই হাত ছাড়া বিউটি কখনো হননি কারো দয়ার পাত্র। নিত্য দিনের কাজকর্মও করেন আট-দশ জনের মতই। তরকারি কাটা, পেঁয়াজ কাটা, রান্না করা, গৃহস্থালীর প্রায় সব কাজই করতে পারে অনায়াসে।

তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, সাংবাদিক ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তার সম্পর্কে জেনেছি। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরাসরি তাকে দেখার সুযোগ হয়নি। সে আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। হাজার প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে পিছিয়ে যায়নি। প্রতিবন্ধী হলেই যে কিছু করা যায় না, সে প্রথাকে সে ভেঙ্গে দিয়েছে। আমাদের বিভাগে ভর্তি হয়েছে তার জন্য আমরা গর্বিত। বিভাগের পক্ষ থেকে তার জন্য অবশ্যই অনেক কিছু করার আছে। বিভাগের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় সে চেষ্টা আমরা সব সময় করবো।

২০১১ সালে শিবপুর নোমানীয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পিএসসি পাস করেন বিউটি। পরে আকলাস শিবপুর শ্যামপুর (বি.এল) উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৪ সালে জেএসসি ও ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হোন। ২০১৯ সালে দুপচাঁচিয়া মহিলা কলেজ থেকে ‘এ গ্রেড’ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৪২৭ স্থান অধিকার করে আইন বিভাগে ভর্তি হন বিউটি।

আরবিসি/০৭ ফেব্রুয়ারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category